সপ্তাহব্যাপী টিকা ক্যাম্পেইন: তথ্য সংরক্ষণে জটিলতা ও টিকা ঘাটতির শঙ্কা

গণটিকা কর্মসূচি চলমান রেখেই দেশে নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সপ্তাহব্যাপী টিকা ক্যাম্পইন শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। বর্তমান কেন্দ্রের পাশাপাশি দেশের সব ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনে এ ক্যাম্পেইন চালানো হবে। এতে এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়া হবে। নিবন্ধন ছাড়া ক্যাম্পেইনে টিকা দেয়া হলে টিকাগ্রহীতাদের তথ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ না হওয়ায় শঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে দ্বিতীয় ডোজের মজুদ না রেখে এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়া হলে সংকট দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কম সময়ে বেশি সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে ৭ আগস্ট থেকে বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ছয়দিনে এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়া হবে। এ ক্যাম্পেইন শেষ হলে চলমান টিকাদান কার্যক্রম বহাল থাকবে। ফের আগামী মাসে আবারো এক সপ্তাহের ক্যাম্পেইন চালানো হবে। তবে সরকারের হাতে এখন ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ৪৭৩টি ডোজ সিনোফার্ম, ৪৪ লাখ ৮৪ হাজার ৪৮৯ ডোজ মডার্না, ৪৪ হাজার ৯০০ ফাইজার এবং ১৫ লাখ অক্সফোর্ডের টিকা রয়েছে। ক্যাম্পেইনের আওতায় সারা দেশের গ্রামাঞ্চল, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা মিলিয়ে ১৫ হাজার ২৮৭টি ওয়ার্ডে ছয়দিনে এক কোটির বেশি ডোজ টিকা দেয়া যাবে। তবে এতে মাত্র দুটি টিকা প্রয়োগ করা হবে। সিটি করপোরেশনে মডার্না এবং পৌরসভায় ও ইউনিয়নে সিনোফার্মের টিকা প্রয়োগ করা হবে।

সরকারের টিকাদান কর্মসূচির কর্মকর্তারা বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, ছয় দিনব্যাপী পরিচালিত কর্মসূচিতে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের একটি ওয়ার্ডে তিনটি বুথ, পৌরসভাগুলোয় ১ হাজার ৫৪টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে একটি কেন্দ্র, সিটি করপোরেশনগুলোর ৪৩৩টি ওয়ার্ডে একটি করে কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে। সপ্তাহের চারদিন এ কেন্দ্রগুলো টিকা প্রয়োগ করবে। বাকি দুইদিন ইপিআই নিজস্ব স্বাভাবিক কার্যক্রমে অন্যান্য টিকা প্রয়োগ করা হবে। অস্থায়ী কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে আনতে হবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নিজ নিজ ওয়ার্ডে টিকাদান কেন্দ্র নির্ধারণ করবেন।

বর্তমানে দিনে সর্বোচ্চ টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে। দেশে এ পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৪৪ লাখ ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৯ হাজার প্রথম ডোজ এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৪ লাখ ১৬ হাজার জন।

ক্যাম্পেইনে টিকা প্রয়োগের জন্য ইপিআই কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। চার ধাপে এ প্রশিক্ষণ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ক্যাম্পেইনের প্রতিটি টিকার বুথে একজন স্বাস্থ্যকর্মীর সমন্বয়ে পরিবার ও পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন। প্রতিটি বুথে ২০০ জনকে টিকা দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। তবে সরকারের হাতে যে টিকা আছে তাতে দ্বিতীয় ডোজ সংরক্ষণ করে প্রয়োগ করলে এক সপ্তাহে এক কোটি মানুষকে টিকা দিতে পারবে না সরকার। আর এ সপ্তাহে এক কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা প্রয়োগ করলে তাতে দ্বিতীয় ডোজের মজুদ থাকে না। এতে সময়মতো প্রতিশ্রুত টিকা না এলে আবার টিকার ঘাটতিতে পড়বে দেশ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের হাতে এখন প্রায় সোয়া এক কোটি ডোজ টিকা রয়েছে, যার মধ্যে ক্যাম্পেইনে প্রয়োগযোগ্য মডার্না ও সিনোফার্মের ৯৩ লাখ ৮০ হাজার ডোজ টিকা রয়েছে।

টিকা নেয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে প্রতিপালিত না হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, টিকার ক্যাম্পেইনে সরকার এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার কথা বলছে। তবে এক কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হলেও দ্বিতীয় ডোজের মজুদ সরকারের হাতে নেই। একই সঙ্গে যে টিকা আছে, তার মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ সংরক্ষণের জন্য রেখে দিলে তাতে ৪৬ লাখ মানুষকে দেয়া যাবে। এতে কোনোভাবেই এক কোটি মানুষের টিকা প্রয়োগ হচ্ছে না।

সরকার গঠিত টিকাবিষয়ক বিশেষ কমিটি ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপের (নাইট্যাগ) সদস্য ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমদ বণিক বার্তাকে বলেন, ক্যাম্পেইনে যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে তাতে অনেক ত্রুটি রয়েছে। এসব ত্রুটি সংশোধন না করে টিকা দিলে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তার পরও সরকারের কর্তাব্যক্তিরা টিকাপ্রাপ্তির বিষয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এতে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে। কেন্দ্র ব্যবস্থাপনায় কোনো পর্যবেক্ষণ থাকছে না।

Source: Bonik Barta

Share the Post: