ডেঙ্গুর তিন পর্যায়: সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ‘‌সিভিয়ার’ ডেঙ্গুতে

ডেঙ্গু রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের যেকোনো অঙ্গ বা স্থান থেকে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণের পর্যায়ে চলে গেলে সেটিকে বলা হয় হেমোরেজিক বা সিভিয়ার (মারাত্মক) ডেঙ্গু। ডেঙ্গু রোগের তিন পর্যায়ের মধ্যে এটিকেই ধরা হয় সবচেয়ে মারাত্মক পর্যায় হিসেবে। এক্ষেত্রে রক্ত বমি বা মুখ, দাঁতের মাড়ি, নাক-কান বা মলদ্বারসহ যেকোনো অঙ্গ থেকে রক্তপাত শুরু হয়। কমে যায় রক্তের প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকা।

রোগতত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন, মানবদেহে দেড় লাখ থেকে চার লাখ প্লাটিলেট থাকে। এটি রক্তকে জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। এর সংখ্যা ২০ হাজারের নিচে নামলে স্বাভাবিক জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়ে শরীরে বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত বেরিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর মৃত্যু হয়। এসব রোগীর ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে পড়ার ঝুঁকি বেশি।

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর দুটি প্রধান কারণ হিসেবে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোমকে সবচেয়ে বেশি দায়ী করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির বক্তব্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু রোগকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সতর্ক সংকেতহীন বা স্বাভাবিক ডেঙ্গু, সতর্ক সংকেতসহ মাধ্যমিক পর্যায়ের ডেঙ্গু এবং মারাত্মক বা সিভিয়ার ডেঙ্গু।

সংস্থাটি বলেছে, বেশির ভাগ ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে কারো কারো সাধারণ উপসর্গ থাকে আবার কারো থাকে না। অনেক ক্ষেত্রেই এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রোগটি ভালো হয়ে যায়। মারাত্মক বা সিভিয়ার ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো জটিল আকার ধারণ করে। জ্বর কমে যাওয়ার পর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম দিনের মধ্যে মারাত্মক ডেঙ্গু দেখা দিতে পারে। এতে রক্তচাপ কমে যায়, গুরুতর পেটে ব্যথা, অবিরাম বমি, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্তপাত, ক্লান্তি, অস্থিরতা, বমি বা মলে রক্ত, খুব তৃষ্ণার্ত, ত্বক ফ্যাকাশে ও ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর সঙ্গে শরীরের একাধিক অঙ্গ একপ্রকার অকার্যকর হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে সময়মতো প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসা নেয়া হলে রোগীকে সুস্থ করা যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর এ পর্যন্ত ২২৯ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ৫০৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে চারজন। সব মিলিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তির মোট সংখ্যা ৪৪ হাজার ২০৫।

দেশে চলতি বছর ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে বেশি রোগীর মৃত্যু হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শক সিনড্রোম ছাড়াও ডেঙ্গু হেমোরেজিকে মৃত্যু কম নয়। এর পরও গুরুত্ব পাচ্ছে না মারাত্মক ডেঙ্গু। অধিদপ্তর থেকে ডেঙ্গুতে মৃতদের মধ্যে ৩৮ জনের তথ্য সংগ্রহ করেছে বণিক বার্তা। তাদের বেশির ভাগই হেমোরেজিক ও শক সিনড্রোম নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির দিন বা পরদিন মৃত্যু হয়েছে। কোনো কোনো রোগীকে জেলা ও জেনারেল হাসপাতাল থেকে বিশেষায়িত (টারশিয়ারি) হাসপাতালে নেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।

খাগড়াছড়ির ১৬ বছরের কিশোরী সুমাইয়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় গত ১৮ জুন। এর আগের দিন তাকে জেলা হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। রক্তের প্লাটিলেট কমে গিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত সুমাইয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে।

একইভাবে ২৭ এপ্রিল ৪৫ বছর বয়সী নরসিংদীর জামাল হোসেনের মৃত্যু হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। হাসপাতালে ভর্তির দিনই মারাত্মক ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল তার। শুধু সুমাইয়া বা জামালই নয়। চলতি বছর যেসব ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে সিংহভাগের মৃত্যু হয়েছে মারাত্মক ডেঙ্গুতে।

সুমাইয়ার চাচা শহিদুল গতকাল সন্ধ্যায় বণিক বার্তাকে জানান, তার ভাতিজি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে খাগড়াছড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার তিনদিন পর জরুরি চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় তাকে চমেক হাসপাতালে নেয়া হয়। সে সময় রোগীর অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। প্লাটিলেট কমে যাওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছিল সুমাইয়ার। জেলা হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া গেলে তাকে বাঁচানো যেত বলে ধারণা শহিদুলের।

দেশে স্বাস্থ্য কাঠামোয় রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা পর্যাপ্ত বিশেষায়িত সেবা নেই বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোয় সাধারণত বেলা ২টা পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকেন। ভর্তি রোগীদের জন্য আবাসিক চিকিৎসক থাকেন।

২টার পর সংকটাপন্ন কেউ এলে তাকে বিশেষায়িত চিকিৎসা দেয়া কঠিন। জুনিয়র মেডিকেল অফিসার ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিক বিশেষায়িত চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত নন। ডেঙ্গু হেমোরেজিক রোগীর ক্ষেত্রেও তাই। রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা দিতে হয়। রোগীর স্বজনরা অনেক ক্ষেত্রে দ্রুত প্লাটিলেট সংগ্রহ করতে পারেন না। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ভালো ব্যবস্থা নেই। এমনকি এসব অঞ্চলে রাতে বেশির ভাগ ওষুধের দোকানও বন্ধ থাকে। রাতে রোগীকে হাসপাতালে নেয়া হলেও সঠিক চিকিৎসা না মেলার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

ডেঙ্গুর জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা পর্যাপ্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ডব্লিউএইচও ডেঙ্গুর গাইডলাইনে রোগটিকে তিন ভাগে ভাগ করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক গাইডলাইনেও এ, বি ও সি এভাবে তিন পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এ পর্যায়ে রয়েছে যেসব ব্যক্তি ডেঙ্গু পজিটিভ, বি পর্যায়ে ডেঙ্গু পজিটিভ তবে ঝুঁকিতে রয়েছে যেমন শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী ও বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত। আর যারা সি পর্যায়ে, তারা মারাত্মক অবস্থায় রয়েছে। আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছি, ডেঙ্গু পজিটিভ হলে তাকে হাসপাতালে পাঠানোর বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। যেসব রোগীর বাড়িতে ভালো ব্যবস্থাপনা নেই তাদেরকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ফিল্ড হাসপাতাল করা যেতে পারে। যারা ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের মাধ্যমিক পর্যায়ের হাসপাতালে রাখতে হবে। আর যেসব রোগীর অবস্থা মারাত্মক, তাদের দ্রুত টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতালে পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে এ পর্যায়ের হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকতে হবে।’

এ রোগতত্ত্ববিদের মতে, ‘‌ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা গতানুগতিক থাকছে। চিকিৎসার গাইডলাইন সারা বিশ্বে একই। বিদ্যমান স্বাস্থ্য অবকাঠামোয় তিন পর্যায়ে ভাগ করে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। শহরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা দুর্বল, তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিশেষায়িত চিকিৎসা রয়েছে। মফস্বল ও গ্রামে বিদ্যমান চিকিৎসা কাঠামোয় এ কাজ করা গেলেও বিশেষায়িত চিকিৎসা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অপর্যাপ্ত। ডেঙ্গুর পরিস্থিতি ক্রমেই বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে তিন পর্যায়ে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো হলো প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও টারশিয়ারি। প্রাথমিক পর্যায়ের হাসপাতালগুলো হলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক। মাধ্যমিক পর্যায়ের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান হলো ১০০ শয্যা থেকে ৫০০ শয্যার জেলা ও জেনারেল হাসপাতাল। আর টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতালগুলো মূলত পাঁচ শয্যার ওপরের যেকোনো হাসপাতালকে বোঝানো হয়। এর মধ্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট হাসপাতালগুলো রয়েছে। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকেই এ সংজ্ঞার আলোকে ভাগ করা হয়।

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ বছর ডেঙ্গুতে শক সিনড্রোম হচ্ছে বেশি। একই সঙ্গে ডেঙ্গু হেমোরেজিক বেশি হলেও এ-সংক্রান্ত সঠিক বৈজ্ঞানিক তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়নি। পরিস্থিতি ডেঙ্গু রোগের পর্যায়গুলোকে তিন ভাগে করা হয়েছে। আর সংক্রমণের ভিত্তিতে ডেঙ্গুর ধরন চারটি। এর মধ্যে কেউ প্রথমে একটি ধরনে আক্রান্ত হয়ে পরে অন্য ধরনে আক্রান্ত হলে তাদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে শক সিনড্রোম হতে দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে রোগীর রক্তচাপ কমে যায়, শরীরে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত চলাচল কমে যায়, বিভিন্ন অঙ্গের কোষে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় রক্ত এবং অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র ও কিডনি অকার্যকর হতে শুরু করে। শক সিনড্রোম ও হেমোরেজিক একসঙ্গেও হতে পারে।

মারাত্মক ডেঙ্গুর বিষয়ে তাৎক্ষণিক জরুরি চিকিৎসার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘চলতি বছর ডেঙ্গু মারাত্মক হচ্ছে। স্বাভাবিক উপসর্গগুলো দেখা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে রোগী বুঝতে সময় লেগে যাচ্ছে। হাসপাতালে আসতে দেরি হচ্ছে। যার ফলে মৃত্যু বেশি হচ্ছে। ডেঙ্গু সিভিয়ার পর্যায়ে গেলে হাসপাতালে এলেও অনেক সময় কিছু করার থাকে না। তাই আগেই সতর্ক হতে হবে। আমরা শুরু থেকেই বলেছি, যথাযথ ব্যবস্থাপনা প্রস্তুত রাখতে। সরকারি হাসপাতালে অভিযোগের শেষ নেই। এগুলো প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার বিষয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। সরকারি হাসপাতালে জরুরি মুহূর্তে চিকিৎসা না পেলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? এবার নারী ও শিশুদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে। তাদের শক সিনড্রোমে যেমন মৃত্যু হচ্ছে, তেমনি ডেঙ্গু হেমোরেজিকেও মৃত্যু হচ্ছে।’

যেসব দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি সেসব দেশে রোগীর অনুপাতে মৃত্যু বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা ইউরোপীয় রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (ইসিডিসি)। সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে ব্রাজিল, বলিভিয়া, পেরু ও আর্জেন্টিনায়। এরপর মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, আফগানিস্তান, লাওস, কম্বোডিয়া, চীন, অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, ভানুয়াতু, মালদ্বীপসহ শতাধিক দেশে। তবে আক্রান্ত রোগীদের অনুপাতে মৃত্যুর হার বাংলাদেশে বেশি।

ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগে প্রতি বছর ৪০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটি বলছে, পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। ডেঙ্গুর জন্য নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। প্রাথমিকভাবে শনাক্তকরণ ও উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা রোগীকে সুস্থ করে তোলে এবং মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়।

দেশে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় ডেঙ্গু রোগীদের জন্য শয্যা বাড়ানো হচ্ছে, জরুরি চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও ওষুধও পর্যাপ্ত। যেসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসক ও নার্সের সংকট রয়েছে, সেসব স্থানে লোকবল পদায়ন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রচার-প্রচারণার কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেরিতে হাসপাতালে এলে ঝুঁকি বেশি হচ্ছে। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিয়ে যেসব অভিযোগ দেয়া হচ্ছে তা সঠিক নয়।’

উল্লেখ্য, দেশে প্রথম ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গুকে রোগতত্ত্বের গুরুত্ব দেয় সরকার বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য থেকে জানা যায়। বাংলাদেশের মধ্যে ১৯৬৪ সালে প্রথম ঢাকায় সংক্রমণ ঘটায় ডেঙ্গু। ২০২২ সালে ৬১ হাজার রোগীর মধ্যে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। ওই বছর দেশে সর্বোচ্চসংখ্যক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে সর্বোচ্চসংখ্যক ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। গত ২২ বছরে (২০২৩ বাদে) দেশে আড়াই লাখের বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এর মধ্যে মারা গেছে ৮৫০ রোগী।

Source: Bonik Barta

Share the Post: