বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মারা গেছেন বহু মানুষ। বিভিন্ন শ্রেণীপেশা ও বয়সী মানুষের এসব মরদেহের সিংহভাগই আনা হয়েছে সরকারি হাসপাতালে। এরই মধ্যে পরিচয় পাওয়া মৃতদের আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তান্তরও করা হয়েছে পরিবারের কাছে। তবে এখনো পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় বেশ কয়েকটি মরদেহ রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও রয়েছে কয়েকটি মরদেহ। স্বজন না পাওয়ায় সৎকারের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খুঁজছে কোনো সহৃদয় ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের নোটিসবোর্ডে বিজ্ঞপ্তিও ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৮-২২ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ২১টি মরদেহ এসেছে। ৪-৬ আগস্ট পর্যন্ত মরদেহ এসেছে ২০টি। হাসপাতালে আসার দিন বা পরদিনই বেশির ভাগ মরদেহ নিয়ে যান স্বজন বা আন্দোলনকারীরা। এক্ষেত্রে ব্রট ডেথ (মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা) হস্তান্তরে যে পুলিশি আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে তাও মানা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে হাসপাতালটিতে চারটি মরদেহের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। ফলে তাদের সৎকারের বিষয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গতকাল সরজমিনে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন নোটিসবোর্ডে পরিচালক ডা. মো. শফিউর রহমানের সই করা বিজ্ঞপ্তি। তাতে বলা হয়েছে, ‘গত ১৬ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলমান অবস্থায় নিহত পরিচয়বিহীন ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কিছু মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে। এসব মরদেহের পরিচয়, ঠিকানা বা কোনো দাবিদার পাওয়া যায়নি। এমনকি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। ফলে সৎকারের প্রয়োজনে উক্ত বেওয়ারিশ মরদেহ গ্রহণে আগ্রহী কোনো সহৃদয় ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে স্বাগত জানাচ্ছে।’ পরিচালকের স্বাক্ষর করা ওই বিজ্ঞপ্তিটি ১১ আগস্ট দেয়া হয়েছে।
হাসপাতালের হিমঘর ও পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মৃত ওই ব্যক্তিদের আনুমানিক বয়স যথাক্রমে ৫০, ৩৫, ২৮ ও ১৫ বছর। এর মধ্যে মাত্র একটি মরদেহ পাঠানো হয়েছে কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মর্গে। বাকিগুলোর আইনি প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে।
নিয়ম অনুযায়ী, মৃত অবস্থায় কাউকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে সেক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করা হয়। এতে স্থানীয় থানার ছাড়পত্র নিয়ে পাঠানো হয় কলেজের মর্গে। সেখানেই ময়নাতদন্ত হয়। মরদেহের ময়নাতদন্ত কার্যক্রম করে কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ। পুলিশ ছাড়পত্র দিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করে। আর ময়নাতদন্তের প্রয়োজন হলে তা কলেজের মর্গে পাঠানো হয় পুলিশের মাধ্যমে।
কলেজ মর্গের ডোম শ্রী যতন কুমার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কতটি মরদেহ হাসপাতালে এসেছে তা আমরা বলতে পারব না। আমাদের এখানে যে মরদেহগুলো আসবে তা সবগুলোই পুলিশের মাধ্যমে আসবে। হাসপাতাল থেকে বা পুলিশ সরাসরি অন্য কোথাও থেকে নিয়ে আসুক না কেন পুলিশ কেস ছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলেজের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাঠাতে পারবে না। গতকাল একটি মরদেহ পুলিশের মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখানে রেখেছে। তবে সেটির ময়নাতদন্ত এখনো হয়নি।’
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিউর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা অনেক মরদেহের স্বজন পেয়েছি। তারা মরদেহ নিয়ে গেছেন। অজ্ঞাতনামা মরদেহগুলোর পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করা হয়েছে। মরদেহ বেশি দিন রাখার সুযোগ কম। সংরক্ষণের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এখন পুলিশের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা এজন্য চেষ্টা করছি। এসব মরদেহের আঙুলের ছাপ ও ডিএনএর নমুনা রাখা হবে, যাতে পরে কেউ এলে তাকে জানানো যায়। তবে সৎকারের জন্য যে কেউ আমাদের কাছ থেকে মরদেহগুলো নিয়ে যেতে পারেন। আপনি চাইলেও নিয়ে গিয়ে সৎকার করতে পারেন।’