ফাইজারের টিকা হাতছাড়া করবে না সরকার: সংরক্ষণে সহায়তা দেবে ইউনিসেফ

ফাইজারের টিকা হাতছাড়া করবে না সরকার: সংরক্ষণে সহায়তা দেবে ইউনিসেফ

যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফাইজার এবং জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনা ভ্যাকসিন ‘কমিরনাটি’ মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। এটি সংরক্ষণের মতো পর্যাপ্ত কোল্ড চেইন বাংলাদেশের নেই। তার পরও কভিড ভ্যাকসিনের জন্য গড়ে ওঠা বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি ফাইজার-বায়োএনটেকের যে টিকা বাংলাদেশকে দিতে চায়, তা হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না সরকার। এক্ষেত্রে ভ্যাকসিনটি সংরক্ষণে সহায়তা দেবে জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। ইউনিসেফের ওপর ভরসা করেই টিকাটি পেতে কোভ্যাক্সকে চিঠি পাঠাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ফাইজারের টিকা হাতছাড়া করবে না সরকার: সংরক্ষণে সহায়তা দেবে ইউনিসেফ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশসহ কোভ্যাক্স উদ্যোগের আওতায় থাকা ৯২টি দেশকে চিঠি দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। জানুয়ারির শেষ নাগাদ বা ফেব্রুয়ারিতে ফাইজার-বায়োএনটেকের স্বল্পসংখ্যক টিকা দেবে তারা। বাংলাদেশ এ টিকা নিতে চায় কিনা, তা ১৮ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বা চার লাখ মানুষের জন্য আট লাখ ডোজ টিকা দেয়া হবে। সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর প্রয়োগের শর্তে এ টিকা পাবে বাংলাদেশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদিত ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিনটি এরই মধ্যে কয়েকটি দেশে প্রয়োগ শুরু হয়েছে।

ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের জন্য যে মাত্রার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের দরকার হয়, তা দেশে খুব কম প্রতিষ্ঠানেরই আছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, এ টিকা সংরক্ষণের সরকারি ও বেসরকারিভাবে জায়গা খুব কম। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি), সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম), কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কিছু কোল্ড চেইন রয়েছে। সেখানে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার টিকা সংরক্ষণ করা যায়। তবে এর বেশির ভাগই গবেষণার কাজে ব্যবহূত হয়। এছাড়াও আট লাখ ডোজ টিকা সংরক্ষণের জন্য এ কোল্ড চেইন পর্যাপ্ত নয়। আইসিডিডিআর,বি এবং নিপসমের কোল্ড চেইন এখন পূর্ণ রয়েছে। আইইডিসিআরের কোল্ড চেইন সাধারণত গবেষণায় ব্যবহার করা হয়। এখানে ভাইরাস সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এ কোল্ড চেইনে টিকা রাখতে হলে তা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এর মধ্যে বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল তাদের দুই-তিনটি কোল্ড চেইন ব্যবহারের জন্য সরকারকে দিতে চেয়েছে। এত কিছুর পরও তা পর্যাপ্ত নয়।

এ অবস্থায় ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা সংরক্ষণের জন্য ইউনিসেফ বাংলাদেশকে সহায়তা করবে বলে জানা গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় বণিক বার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। বাংলাদেশ মার্চের শুরুতে কোভ্যাক্সের আওতায় ফাইজারের টিকা পাবেন বলে আশা করেন তিনি।

ফাইজারের টিকার নেয়ার জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ এ মর্মে চিঠি যেকোনো সময় পাঠানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইউনিসেফের দেয়া কোল্ড চেইন পেলে ফাইজারের টিকা সংরক্ষণে আমাদের কোনো সমস্যা থাকবে না। তবে কতটুকু ধারণ ক্ষমতার কোল্ড চেইন তারা আমাদের দেবে তা নিশ্চিত নই। তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’

ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের জন্য গত সোমবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ইউনিসেফের বৈঠক হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক এ সংস্থার একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে তারা কী বৈশিষ্ট্যের রেফ্রিজারেটর দেবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।

করোনার টিকা বিতরণ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর জানান, ইউনিসেফ পাঁচটি রেফ্রিজারেটর দেয়ার কথা বলেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চাহিদা দিলে ২১ দিনের মধ্যে তারা সরবরাহ করতে পারবে। এ ফ্রিজের প্রতিটি চারশত লিটারের হলে পাঁচটিতে সাড়ে চার লাখ ফাইজারের টিকা রাখা যাবে। তবে তাদের কথা অনুযায়ী আটশ লিটারের রেফ্রিজারেটর পেলে তাতে প্রায় নয় লাখ ডোজ টিকা রাখা যাবে।

উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন-গ্যাভি এবং সংক্রামক রোগের টিকা তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক সংস্থার (সিইপিআই) নেতৃত্বে ১৯০টি সদস্য দেশ নিয়ে গড়ে ওঠে কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি। চলতি বছরের মধ্যে তারা বাংলাদেশকে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা দেবে।

Source: Bonik Barta

Share the Post: