অবকাঠামো বৃদ্ধিতেও ঘাটতি বিশেষায়িত সেবায়: হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় বাড়লেও আস্থা বাড়েনি

দেশের সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় গত কয়েক দশকে অবকাঠামোগত আধুনিকায়ন হলেও রোগীদের আস্থা বাড়েনি। ভুল রোগ নিরীক্ষা, বিশেষায়িত চিকিৎসা না পাওয়া, প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। অথচ বছরে স্বাস্থ্যসেবার পেছনে যে খরচ হচ্ছে তার ২৪ শতাংশই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে ব্যয় করছে রোগীরা। তবে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে রোগীদের বড় একটি অংশ ছুটছে বিদেশের হাসপাতালে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তাই মনে করছেন, দেশে চিকিৎসা ব্যয় আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেলেও রক্ষা হচ্ছে না রোগীর অধিকার।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট ১৯৯৭ থেকে ২০২০ সালের তথ্য নিয়ে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্ট প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, প্রতি বছরই বৃদ্ধি পেয়েছে স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়। দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে রোগীরা বছরে ব্যয় করছে সোয়া ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, জেলা বা জেনারেল হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন হাসপাতাল রয়েছে মোট ৭৫০টি। এর বাইরেও সরকারের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নিবন্ধনকৃত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৯৮। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট শয্যাসংখ্যা ১ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি। এর মধ্যে বেসরকারিতেই রয়েছে সাড়ে ৯৪ হাজার শয্যা। আর বেসরকারি রোগ নিরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে প্রায় ১০ হাজার ও ব্লাড ব্যাংক ১৮০টি। এ হিসাবে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের আকার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কয়েক গুণ। নব্বইয়ের দশক থেকেই দেশে বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে বলে এক জরিপে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত ওই জরিপ থেকে জানা যায়, সারা দেশে নব্বইয়ের দশকে বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে উঠেছিল ৩৮৪টি। এর পরের দশকগুলোয় ক্রমেই বেড়েছে এ সংখ্যা।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের প্রকাশিত হেলথ অ্যাকাউন্টসে ২০২০ সালের হিসাব ঘেঁটে দেখা যায়, সরকারি, বেসরকারি ও উন্নয়ন সংস্থার আর্থিক স্বাস্থ্য ব্যয়ের আকার ৭৭ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ২৪ শতাংশ হাসপাতাল, বহির্বিভাগে চিকিৎসায় ১৬ শতাংশ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ৮ শতাংশ ব্যয় দেখানো হয়েছে। হাসপাতালভিত্তিক খরচে বলা হয়, ২০২০ সালে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে ১৮ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

এর মধ্যে ৪৮ শতাংশ সরকারিতে ও ৫২ শতাংশ ব্যয় করা হয়েছে বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোয়। গত দুই দশকের হিসাবে এ খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। আর ১২ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে গিয়ে। এর বাইরেও রয়েছে রোগ নিরীক্ষার ব্যয়। অন্যদিকে জনস্বাস্থ্যমূলক কর্মসূচিতে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ৩ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রকাশিত হেলথ অ্যাকাউন্টসে।

দেশের স্বাস্থ্য খাতে বছরে কোন খাতে কত ব্যয় হয় তা ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টসে তুলে ধরা হয় বলে জানান স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ ও ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টসের ফোকাল পয়েন্ট ডা. সুব্রত পাল। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার জন্য ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর যে খরচ হচ্ছে তা হাসপাতালভিত্তিক ব্যয়ে তুলে আনা হয়েছে। এ খরচের মধ্যে এনজিওভিত্তিক হাসপাতালও রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন ধরনের ব্যয় হয়। এর আকার বড়। পৃথিবীর কোনো দেশের সরকারই স্বাস্থ্য ব্যয়ের পুরোটা বহন করতে পারেনি। এজন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যবীমা।’

স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক অবকাঠামো ও সেবার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও মান নিয়ে রয়েছে বেশ অনাস্থা। একই সঙ্গে দেশের সব অঞ্চলে সমানভাবে বিশেষায়িত সেবা পৌঁছায়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ধীরে ধীরে কমলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব। এর মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) বা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা ও শ্বসনতন্ত্রের অন্যান্য রোগ। দেশে বছরে অসংক্রামক রোগে পৌনে ছয় লাখ লোকের মৃত্যু হয়। রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের মধ্যে যা ৬৭ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যকই অর্থাৎ ৩০ শতাংশ হৃদরোগী। বাকি ১২ শতাংশ ক্যান্সার, ১০ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি শ্বসনতন্ত্রের রোগ, ৩ শতাংশ ডায়াবেটিস, ১২ শতাংশ অন্যান্য অসংক্রামক রোগে মারা যায়। তবে এসব জটিল রোগের চিকিৎসার প্রসার সে অনুযায়ী বৃদ্ধি পায়নি। বর্তমানে দেশে ৩২টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসার সুবিধা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৯৫ শতাংশই রাজধানীকেন্দ্রিক বলে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে। একইভাবে ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র ১৭টি সরকারি হাসপাতালে। তবে পরিপূর্ণভাবে ক্যান্সারের চিকিৎসা দুই-একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যগুলোয় পাওয়া যাচ্ছে না। বেসরকারিভাবে ক্যান্সারের চিকিৎসারও তেমন প্রসার ঘটেনি। এছাড়া কিডনি রোগ, স্নায়বিক রোগসহ জটিল রোগের চিকিৎসার প্রসার উৎকর্ষে পৌঁছেনি।

স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালে সেবাবঞ্চিত হয়ে মানুষ বেসরকারিতে যায়। সেখানেও অবহেলার শিকার হতে হয়। সরকারিতে হয়রানি বন্ধ হলে মানুষের আস্থার সংকট কমবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যসেবার পরিসর বৃদ্ধির কথা বলে মূলত বাণিজ্যকে মুখ্য করা হয়েছে। বহু রোগী এসব হাসপাতালে সর্বোচ্চ খরচ করেও ভালো সেবা পাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হচ্ছে প্রতারিত। অব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহির অভাবেই সঠিকভাবে সেবা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এসব নানা কারণে আস্থা সংকটে ভোগা রোগীদের বড় একটি অংশ চিকিৎসার জন্য ছুটছে বিদেশে।

বছরে কত রোগী দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন তার সঠিক হিসাব অবশ্য স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই। তবে বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, চিকিৎসার জন্য বছরে ২০-৩০ লাখ মানুষ বিদেশে যাচ্ছে। এর জন্য তারা বেছে নিচ্ছে ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াকে। এতে বছরে ব্যয় হচ্ছে দুই থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলার। চিকিৎসার আস্থাহীনতার কারণেই বড় অংকের এ বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়, বছরে সাত লাখ মানুষ চিকিৎসার ভিসা নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করছে। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। বিদেশমুখিতায় সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে ভারতে। প্রতি বছরই বাড়ছে এ হার। আবার ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডে বছরে যেসব রোগী চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে তাদের মধ্যে ৩১ শতাংশই ব্যবসায়ী। বাকিদের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী ৮ শতাংশ, শিক্ষার্থী ১০ শতাংশ, বেসরকারি চাকরিজীবী ২৫ শতাংশ। বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যান্সারের রোগী, ২১ শতাংশ। এরপর ১৮ শতাংশ হৃদরোগ, প্রজননবিষয়ক জটিলতা নিয়ে যাচ্ছে ১৩ শতাংশ। এছাড়া অর্থোপেডিক চিকিৎসা, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, লিভার, কিডনি, চোখ, কান ও স্নায়বিক চিকিৎসার জন্যও বিদেশমুখী হচ্ছে রোগীরা।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী ফ্রন্টিয়ার্সে গত মে মাসে ‘ডিটারমিনেন্টস অব বাংলাদেশী পেশেন্ট ডিসিশন মেকিং প্রসেস অ্যান্ড স্যাটিসফ্যাকশন টুওয়ার্ড মেডিকেল ট্যুরিজম ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে ভারতের হাসপাতালগুলো বছরে প্রায় সাড়ে চার লাখ রোগী পেয়ে থাকে। তবে মেডিকেল ভিসার বাইরেও ভ্রমণ ভিসায় গিয়েও চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীদের বড় একটি অংশ। মূলত চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়া, দীর্ঘ সময় অপেক্ষমাণ থাকা, চিকিৎসার সহজলভ্যতার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের রোগীরা বিদেশমুখী হচ্ছে। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশে গমনকারী বাংলাদেশী পর্যটকদের মধ্যে খুব কম গবেষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে রোগীদের সন্তুষ্টির বিষয়টি এখনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি।

বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যে (ফার্মাসিউটিক্যালস, হাসপাতাল ও রোগ নিরীক্ষা কেন্দ্র) সারা দেশে বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে ল্যাবএইড গ্রুপের। আস্থার বিষয় খুঁজতে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবাকে দূরে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এএম শামীম। এ বিনিয়োগকারী বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো কিছুতেই যেন মানুষের আস্থা নেই। কেউ আস্থা রাখার চেয়ে অনাস্থা রাখায় বেশি মনোযোগী। সবাই এগিয়ে না এলে স্বাস্থ্যসেবা পিছিয়ে পড়বে। দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান ও অবস্থান অনেক উন্নত হয়েছে। ‌কিছু বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের অবহেলাকে বড় করে দেখলে ভুল করা হবে। অবশ্যই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্যাটাগরি করতে হবে। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অ্যাক্রিডিটেশন নিশ্চিত করা জরুরি।’

ডা. এএম শামীম বলেন, ‘চিকিৎসা ভুল হয়েছে কিনা তা সাধারণ কেউ বুঝতে পারেন না। এটা বুঝতে হলেও চিকিৎসক প্রয়োজন হয়। সব দেশেই মেডিকেল ব্যবস্থাপনায় কিছু ভুল হয়ে থাকে। কোনো চিকিৎসক ৩০ বছর সেবা দেয়ার পর একটি ভুল হলে তার সারা জীবনের অর্জন বৃথা বলাটা অন্যায়। একই সঙ্গে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান দিনে বহু মানুষকে সেবা দেয়। কিছু ভুল হলে সেখানে চেষ্টায় ঘাটতি রয়েছে কিনা তা দেখতে হবে।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার অনেক ধাপ ও পর্যায় রয়েছে। হাসপাতালভিত্তিক সেবা সেই ব্যবস্থাপনার অনেকগুলো অংশের একটি। মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য হাসপাতালে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে হাসপাতালগুলোকে সর্বোচ্চ জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। বন্ধ করতে হবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে হয়রানি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অন্যায় বাণিজ্য। কেননা অবকাঠামো না থাকা, যন্ত্রপাতির সংকট বা অর্থের সংকটের কারণে যতটুকু সেবা ব্যাহত হয় তার চেয়ে বেশি ব্যাহত হয় অবহেলা ও হয়রানির কারণে। এখানে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। দেশের কিছু বিষয়ে শতভাগ দায়িত্ব সরকারকে নিতে হয়। তার মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা অন্যতম। বেসরকারিতে কেউ চিকিৎসা নিলেও তিনি সঠিক সেবা পেলেন কিনা তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও কিন্তু সরকারি কর্তৃপক্ষের।

দেশের চিকিৎসায় আস্থার সংকটের পেছনে বহু কারণ রয়েছে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘প্রথমত চিকিৎসককে রোগীর জন্য চিকিৎসক হয়ে উঠতে হবে। শিক্ষিত হওয়ার জন্য চিকিৎসক হলে চলবে না। বর্তমান চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থা রোগীর সেবাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া মুখ্য হয়ে উঠেছে। এরপর আসে প্রতিষ্ঠানের কথা। সেগুলো যদি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান হয় তাহলে সেবা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। জবাবদিহিতা ও নিয়ন্ত্রণ জরুরি। রোগীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবায় হাসপাতাল অবকাঠামোর পরিসর সরকারি ও বেসরকারিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। যন্ত্রাংশ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তবে সরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে লোকবলের কিছু সংকট রয়েছে। লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ বিষয়। অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন সঠিক সেবা দেয় সে বিষয়টি আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছি। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটায় কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধও করে দেয়া হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে গ্রেডিংয়ের আওতায়ও আনা হচ্ছে।’ সরকারের এ চিকিৎসক কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আস্থার বিষয়টি ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। কেননা করোনার সময় মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যেতে পারেনি। সে সময় দেশেই চিকিৎসা হয়েছে। তাছাড়া কে কোথায় চিকিৎসা নেবে সেটা বাধ্য করা যায় না। তবে দেশের মানুষ যেন সর্বোচ্চ সেবা পায় তার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

Source: Bonik Barta

Share the Post: