স্বাস্থ্যসেবা খাতে গত এক দশকে সরকারের বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। এ বিনিয়োগের অধিকাংশই ব্যয় হয়েছে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে। নতুন অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি কেনা হয়েছে নতুন যন্ত্রপাতি। শয্যা ও সক্ষমতা বাড়াতে বাস্তবায়ন হয়েছে নানা প্রকল্প। বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও এসব হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না বলে অভিযোগ তুলছেন রোগীরা।
দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় দক্ষ চিকিৎসক ও নার্সের সংকট নিয়ে অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। মেডিকেল যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের মতো দক্ষ জনবলেরও সংকট রয়েছে। বেশির ভাগ সময়ই নষ্ট থাকছে বিপুল অর্থ ব্যয়ে কেনা যন্ত্রপাতিগুলো। ওষুধ সরবরাহের ঘাটতি ও স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টদের পেশাদারত্বের অভাবের অভিযোগও রয়েছে অনেক। জটিল রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিজ জেলা-উপজেলায় চাহিদামাফিক সেবা না পেয়ে রোগীদের বড় একটি অংশ হয়ে পড়ছে ঢাকামুখী।
শুধু জটিল নয়, মৌলিক রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের ঘাটতিতে ভুগছে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলো। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ‘ডাটা কালেকশন সার্ভে অন হেলথ সেক্টর ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে মৌলিক ছয়টি রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা যন্ত্র আছে প্রয়োজনের তুলনায় ৬১ শতাংশের কিছু কম। সে অনুযায়ী এসব হাসপাতালে এসব যন্ত্রের অপ্রতুলতার হার ৩৯ শতাংশের বেশি। আবার যেসব জায়গায় যন্ত্রপাতি রয়েছে, সেখানেও বড় একটি অংশ অকেজো ও নষ্ট। এসব যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি, করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) মনিটর, মাইক্রোস্কোপ ইত্যাদি। জেলা হাসপাতালগুলোয় নষ্ট যন্ত্রপাতির ৯৩ শতাংশ অকেজো পড়ে রয়েছে এক বছরের বেশি সময় ধরে। উপজেলা পর্যায়ের ক্ষেত্রে এ হার ৯৭ শতাংশ।
প্রতিবেদনে নগর ও গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যায় অপ্রতুলতার চিত্রও তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, দেশের শহর এলাকায় প্রতি ১০ হাজার মানুষের বিপরীতে চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন ১৮ দশমিক ২ জন। গ্রামাঞ্চলে এই হার ১ দশমিক ১ জন।
সারা দেশে অন্তত দশটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, এগুলোর চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে বড় ধরনের অসন্তুষ্টি রয়েছে। অবকাঠামোগত সমস্যা, চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ভুগছে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল। আড়াইশ শয্যার হাসপাতালটিতে গড়ে রোগী ভর্তি থাকছে পাঁচ শতাধিক।
হাসপাতালে সেবাদানের সক্ষমতায় ঘাটতির কথা স্বীকার করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও। দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে জনবলের ঘাটতি এখানে সক্ষমতার দ্বিগুণ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে উঠেছে। ১৯৯৭ সালে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়া সরকারের মাধ্যমিক পর্যায়ের এ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে কাঠামো অনুযায়ী লোকবল নেই। অর্ধেকের বেশি চিকিৎসকের পদ খালি। অনুমোদিত পদের বিপরীতে নার্স নেই ৩০ শতাংশ।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদে চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
১৯৮৪ সালে স্থাপিত গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালকে কয়েক দফায় শয্যা বৃদ্ধি করে আড়াইশ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে। এ হাসপাতালেও জনবলের ঘাটতি ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে শুধু ব্যবস্থাপনার অভাবেই প্রত্যাশিত সেবার ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) সাবেক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাস্থ্য নীতি বদলিয়ে জনস্বাস্থ্য নীতি করা দরকার, যেটা জনবান্ধব হবে। দেশে মানুষ সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছে না। ফলে বিরাটসংখ্যক মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে। ধনী লোকের পাশাপাশি দরিদ্র মানুষও বিদেশে যাচ্ছে। তারা সেবায় সন্তুষ্ট না। তাদের মানসম্মত সেবা দিতে গেলে বাজেটের সদ্ব্যবহার করা দরকার। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতা, অপচয় ও দুর্নীতির কারণে বাজেট ঠিকমতো ব্যবহার না হয়ে ফেরত চলে যায়। উপজেলা থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায় পর্যন্ত মানুষ সঠিক সেবা পায় না। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র শক্তিশালী করা জরুরি। সঠিক জনবল ও ল্যাব নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এর পরের ধাপে রোগীকে জেলা হাসপাতালে রেফার্ড করা হবে। রেফারেল ব্যবস্থাপনা না থাকায় রোগীরা কোথায় সঠিক সেবা পাবেন তা বুঝতে পারে না। জেলায় কাজ না হলে পরে ওপরের পর্যায়ে সেবা নেবে। দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান ভালো নয় এর বড় প্রমাণ বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়া। বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা চলে যায় বিদেশে সেবা নিতে গিয়ে। তাই সেবা ও প্রশিক্ষণের মান উন্নয়ন করতে হবে। দেশে প্রশিক্ষণ এখন সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এখানে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে।’
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সাত লাখ মানুষের একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। গড়ে দৈনিক প্রায় একশ রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি থাকে। এর মধ্যে শিশু ও নারীদের সংখ্যা বেশি। তবে বর্তমানে হাসপাতালটিতে সি সেকশনের অস্ত্রোপচার ও প্রসূতিদের বিশেষায়িত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে সেবাপ্রত্যাশীরা জানিয়েছেন। নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার বণিক বার্তাকে জানান, জেলার প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে ৮০-৯৫ জন রোগী। কোথাও কোথাও শতাধিকও ভর্তি হচ্ছে। বহির্বিভাগে পাঁচশ থেকে আটশ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। জেলার আটটি উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে দৈনিক হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘শয্যা ও প্রয়োজনীয় জনবল সংকটের কারণে সেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স দেয়া হলে বিশেষায়িত সেবা এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র চালু করা যাবে।’
জেলা-উপজেলাসহ নানা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে বছর বছর বরাদ্দ বাড়িয়েছে সরকার। পরিকল্পনা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে শুধু স্বাস্থ্যসেবা বিভাগেই উন্নয়ন বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এক দশকের ব্যবধানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা পাঁচ গুণ বেড়ে ১৫ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এছাড়া খাতটির উন্নয়নে সরকার বিনিয়োগ করেছে ৮২ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা।
অন্যদিকে সরকারের বাজেট প্রক্ষেপণেও স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দ বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে এসেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৯ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা, যা আগামী অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৩২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকায়। একই সঙ্গে জেলা-উপজেলা এবং জেনারেল হাসপাতালে বরাদ্দও বাড়বে। এ দুই পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবায় গত অর্থবছরে পরিচালন ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়াবে ৪ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। একইভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য অফিস, সিভিল সার্জন কার্যালয় এবং নার্সিং ইউনিটের বরাদ্দও বছর বছর বাড়বে।
এর পরও সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে মানুষের। এতে বাড়ছে চিকিৎসা খাতে জনগণের অতিরিক্ত ব্যয় (আউট অব পকেট পেমেন্ট)। শুধু ব্যবস্থাপনাগত সংকটের কারণেই জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মানুষকে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত এক দশকে স্বাস্থ্য খাতে যে উন্নয়ন ব্যয় করা হয়েছে, তা জনসাধারণের সেবার কথা চিন্তা করে হয়নি। যদি এমন হতো তাহলে জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের এত বড় বড় ভবন পড়ে থাকত না। লোকবলের সংকট থাকত না। সুদৃঢ় একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন ছিল। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি। কিন্তু সে তুলনায় লোকবল নেই। আবার যন্ত্রাংশ ক্রয়ের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা নেই। ভালো মানের যন্ত্র কেনা হয় না। এখানে একটি স্বার্থান্বেষী মহল রয়েছে, যারা নিজেদের পকেট ভারী করে। সরকারি হাসপাতালে নির্ধারিত মূল্য দিয়ে যখন মানুষ সেবা পায় না, তখন তারা বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হয়। তখন খরচ বেড়ে যায়। আবার সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে হলে অনানুষ্ঠানিক খরচও করতে হয়। সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি, অপরিকল্পনা ও স্বচ্ছতার অভাবে দেশের স্বাস্থ্য খাত রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ঠিকই কিন্তু সেবা বাড়েনি।’
জরুরি চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে রাজশাহীর পুঠিয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে যানবাহনে দুর্ঘটনাকবলিতদের জরুরি চিকিৎসার জন্য স্থাপিত একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানটিতে চারঘাট, বাগাতীপাড়া, বাঘা, দুর্গাপুর ও নাটোর সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে প্রতিদিন শতাধিক রোগী সেবা নিতে আসছে। হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, পুরো কমপ্লেক্সে অপরিচ্ছন্নতা। দীর্ঘদিন ধরে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট চলছে। কমপ্লেক্সের অধিকাংশ লাইট ও ফ্যান অকেজো। বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলেও তা চালু নেই। অপারেশন থিয়েটার, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ মৌলিক বিভিন্ন রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আধুনিক যন্ত্র স্থাপন করা হলেও তা অব্যবহৃত রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কুকুর ও সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা মিলছে না।’
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে একজন চিকিৎসক বলেন, ‘বর্তমানে একজন এমবিবিএস চিকিৎসক টানা ২৪ ঘণ্টা করে জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা জরুরি সেবা পাচ্ছে না।’
কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় সেবাগ্রহীতার হার দিনে দিনে কমে আসছে বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এ উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ২০১৬ সালে সারা দেশের চিকিৎসা সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবাগ্রহীতার হার ছিল ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশে। আর জেলা বা সদর হাসপাতালে ২০১৬ সালে সেবাগ্রহীতার হার ছিল ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৯৯ শতাংশে। যদিও এ সময় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সেবা নেয়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালে এ হার ছিল ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। ২০২২-এ তা ১৩ দশমিক ১২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে শুধু অবকাঠামো নির্মাণ করা হলেও দক্ষ জনবল এবং জনবান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যায়নি বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা ও মান বৃদ্ধির জন্য বেশকিছু বিষয়ের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এর মধ্যে অবকাঠামো একটি অংশ মাত্র। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত ওষুধ বা রসদ দরকার হয়। দক্ষ জনবল, নার্স-ডাক্তার লাগে। সর্বোপরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য একটি সুসমন্বিত ব্যবস্থাপনা দরকার হয়। এখানে বিনিয়োগ করে প্রচুর অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু রসদ, সুষ্ঠু সেবার জন্য জনবল গড়ে ওঠেনি। অদক্ষ এবং অপূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা চালু রয়েছে। তাই মানুষ আসছে না। সেজন্যই সেবার জন্য মানুষ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে যায়।’
নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল তিন বছর আগে আড়াইশ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত হলেও প্রয়োজনীয় জনবল, ওষুধ ও খাবারের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। হাসপাতালে ৬৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ১৭ জন চিকিৎসক। এমআরআই, সিটি স্ক্যানসহ বেশ কয়েকটি ব্যয়বহুল রোগ নিরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় বেসরকারি রোগ নিরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছে রোগীরা। রাঙ্গামাটি জেলা হাসপাতালেও একই চিত্র দেখা যায়।
তবে সেবার মান না বাড়া ও প্রত্যাশিত সেবার ঘাটতির বিষয়টি মানতে নারাজ সরকারের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. সাইদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আগের চেয়ে সেবার মান বাড়ছে। রোগীও বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোকে সক্ষমতার বেশি সেবা দিতে হচ্ছে। এতে সেবা দেয়ার গতি ও মানে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। আর সেবার সন্তুষ্টির বিষয়টি সম্পূর্ণ আপেক্ষিক। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে গত এক দশকে সেবার মান ও সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।‘
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বণিক বার্তার কক্সবাজার, গাইবান্ধা, নোয়াখালী, রাজশাহী, নওগাঁ ও রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি)