টিকা পাওয়ার অনিশ্চয়তায় দ্বিতীয় ডোজ নিয়েই শঙ্কা

কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭০ লাখ ডোজ দেশে এসে পৌঁছেছে। নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এর বাইরেও ৩২ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে দিয়েছে ভারত। গত ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে শুরু হওয়া টিকাদান কার্যক্রমের আওতায় এরই মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫২ লাখের বেশি মানুষ। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে চুক্তি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি ও মার্চে টিকা সরবরাহ করতে পারেনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট। এ দুই মাসে ৮০ লাখ ডোজ টিকা কম সরবরাহ হয়েছে। এতে দেশে চলমান টিকা কার্যক্রমে প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে টিকা সরবরাহে বৈশ্বিক সংকটের কথা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও)।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারিতে সারা দেশে গণটিকা কর্মসূচি শুরু করে সরকার। গতকাল পর্যন্ত মোট ৫২ লাখ ৬৩ হাজার ২৪৮ জন নারী ও পুরুষ এ টিকা নিয়েছেন। গতকাল রোববার ৫৮ হাজারের কিছু বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ শুরু করার কথা রয়েছে। এ সময় পর্যন্ত ৬০ লাখ মানুষ টিকা নিলে তাদের জন্য দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংকট দেখা দেবে। বাংলাদেশের হাতে টিকা রয়েছে ৪৯ লাখের কিছু বেশি।

গত নভেম্বরে নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ‘কোভিশিল্ড’ টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে সরকার। টিকার দাম পরিশোধ করা হয় অগ্রিম। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে আসার কথা। গত জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ টিকা এলেও ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২০ লাখ ডোজ। চলতি মাসে কেনা টিকার চালান এসে পৌঁছেনি। তবে দুই দফায় বাংলাদেশকে ৩২ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দিয়েছে ভারত। সম্প্রতি টিকা রফতানিতে স্থগিতাদেশ জারি করেছে দেশটি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে সংখ্যক টিকা রয়েছে, তাতে দ্বিতীয় ডোজ চালানো যাবে। এরপর কোভ্যাক্স থেকে টিকা আসবে। আমাদের কিছু সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে। এটা গোটা পৃথিবীর সমস্যা, শুধু আমাদের দেশের নয়।’

এদিকে টিকার সংকটের কারণে বৈশ্বিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। করোনাভাইরাসের তৃতীয় পর্যায়ের সংক্রমণে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ সময়ে ব্রিটিশ-সুইডিশ মালিকানাধীন অ্যাস্ট্রাজেনেকা চুক্তি অনুযায়ী সেসব দেশকে টিকা সরবরাহ করতে পারছে না বলে হতাশা প্রকাশ করেছে ইইউ। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা সরবরাহ করতে না পারলে অন্যান্য দেশে রফতানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইইউর প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লায়েন। সংকটের কারণে ডব্লিউএইচওর তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটিভুক্ত দেশগুলোয় টিকা বিতরণ বিলম্বিত হবে। সেরাম ইনস্টিটিউটের রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে এ পরিস্থিতি হবে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।

এপ্রিলে দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ শুরু হলে সে সময়ে নতুন করে প্রথম ডোজ প্রয়োগ ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করেন সরকারের করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যাদের প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে, তাদের দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ শুরু করা যাবে। তবে ওই সময়ে প্রথম ডোজ প্রয়োগ শুরু করাটা কঠিন হয়ে যাবে। ভারত রফতানি বন্ধ করায় টিকা কার্যক্রম একটা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে। এর ফলে করোনা টিকার জন্য গড়ে ওঠা বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি বাধার মুখে পড়ছে। টিকার ক্ষেত্রে এখন বৈশ্বিক সমস্যা তৈরি হয়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, চলতি মাসের শুরুতে সরকার আরো তিন কোটি ডোজ টিকা কিনতে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। করোনার টিকা প্রস্তুতকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। এছাড়া করোনাভাইরাসের টিকার জন্য গড়ে ওঠা বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাবে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১ কোটি ৯ লাখ ডোজ শিগগিরই পাওয়ার কথা বলছেন কর্মকর্তারা। এছাড়া টিকার জন্য সেরাম বাদে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেনি সরকার।

করোনার টিকা বিতরণ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের টিকার ঘাটতি হবে না, যা আছে তা শেষ করতে আরো সময় লাগবে। এর মধ্যে নতুন করে তিন কোটি টিকা কেনার জন্য কার্যক্রম চলছে। কোভ্যাক্স থেকে টিকা পাওয়া গেলে কোনো সমস্যা হবে না।’

উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ১ হাজার ৫টি কেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব কেন্দ্রে মোট ২ হাজার ৪০০টি দল টিকা প্রয়োগের কাজ করছে। প্রতিটি দলে দুজন টিকা প্রয়োগকারী ও চারজন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। প্রতিটি দল দৈনিক ১৫০ জনের শরীরে টিকা প্রয়োগে সক্ষম বলে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে হিসেবে দৈনিক সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষের শরীরে টিকা প্রয়োগের সক্ষমতা রয়েছে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দেয়া হয়।

Source: Bonik Barta

Share the Post: