মানা হচ্ছে না অবকাঠামোগত বাধ্যবাধকতা। রয়েছে শিক্ষকস্বল্পতাও। শিক্ষা কার্যক্রম চলছে ভাড়া করা ভবনে। অনুসরণ করা হচ্ছে না নির্ধারিত শিক্ষাক্রমও। কলেজের হাসপাতাল চলছে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করেই। শিক্ষা উপযোগিতার এসব ঘাটতি পূরণে বারবার তাগাদা দিচ্ছে সরকার। তার পরও তা পূরণের কোনো উদ্যোগই নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এমন সব অভিযোগ নিয়েই চলছে দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম।
দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে ৭২টি। স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এসব মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। প্রায় সমসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রতি বছর বেসরকারি এসব মেডিকেল কলেজ থেকে তাদের এমবিবিএস সম্পন্ন করছেন। শিক্ষা কার্যক্রম ও অবকাঠামোর সমস্যা নিয়ে চলছে এসব চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বড় একটি অংশ। নির্ধারিত শিক্ষাক্রম না মানা ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেরই শিক্ষায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবায় তারা যুক্ত হচ্ছেন মানহীন চিকিৎসক হিসেবে।
দেশের স্বাস্থ্যশিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিংহভাগ বেসরকারি মেডিকেল কলেজই এখন মানহীন চিকিৎসক তৈরি করছে। দেশের জনসাধারণের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে পারছেন না তারা। কোনো কোনো কলেজের অবস্থা এতই নাজুক, সেখানকার শিক্ষার্থীরা নিজেরাও চিকিৎসক হিসেবে নিজেদের সম্ভাবনা নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগছেন। শিক্ষাক্রমে ঘাটতির কারণে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পরও চিকিৎসক হিসেবে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন পাওয়া নিয়ে সংশয়ে থাকেন তারা।
দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনার জন্য সরকারের একটি নীতিমালা রয়েছে। এ নীতিমালায় বেসরকারি কলেজের জন্য নিজস্ব জমি, আলাদা কলেজ ও হাসপাতাল ভবন থাকার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। এছাড়া নীতিমালায় কলেজ ও হাসপাতালের ফ্লোর স্পেস, বেসিক সায়েন্সের শিক্ষক, হাসপাতালের শয্যা, রোগী ভর্তির হারসহ সংশ্লিষ্ট আরো অনেক বিষয় নিয়ে কিছু মৌলিক শর্তেরও উল্লেখ রয়েছে। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশের ৭০ শতাংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজেরই এসব শর্ত ও বাধ্যবাধকতা পরিপালনে ঘাটতি রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসব মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করে নিয়মিত প্রতিবেদন দেন। এর ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ঘাটতি পূরণের জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু এর পরও কলেজগুলোকে ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। এমনকি স্বনামধন্য কয়েকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধেও এমন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এসব মেডিকেল কলেজের বেশির ভাগেরই হাসপাতালে শয্যা সংখ্যার ঘাটতি রয়েছে। হাসপাতালে শয্যায় রোগী ভর্তির হার ৭০ শতাংশ হওয়ার কথা থাকলেও তা অনেক মেডিকেল কলেজেই নেই। অর্ধেকের বেশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে বেসিক সায়েন্স বিভাগে শিক্ষকস্বল্পতা রয়েছে। জমি ও ফ্লোর স্পেস সংকট থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছরই তারা শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করে আসছে।
দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে উল্লেখ করে জাতীয় স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব বণিক বার্তাকে বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন আইন নেই। যে নীতিমালা আছে, তা যথেষ্ট নয়। নীতিমালা কখনই আইনের মতো শক্তিশালী নয়। মেডিকেল কলেজগুলো বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত হতে হয়। প্রণীত কারিকুলাম অনুযায়ী কোর্সে পাস করলে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন দেয় বিএমডিসি। সরকার যখন মেডিকেল কলেজগুলোর অনুমতি দেয়, তখন নিয়ম না মানলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কিছু করার থাকে না। এরপর বিএমডিসিও আর দ্বিমত করে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কলেজ রূপে মেডিকেল কলেজগুলো কার্যক্রম চালায়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। আর কলেজগুলো চলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে।
সংসদে পাস হওয়া আইন ছাড়া বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় উল্লেখ করে এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন যেমন ইচ্ছা তেমন অনুমোদন দেয়। জবাবদিহিতা কম। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোরও একই অবস্থা। হাতে গোনা কয়েকটি সরকারি মেডিকেল কলেজ বাদে বাকিগুলোয় শৃঙ্খলা নেই।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১১ (সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৫০ শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হলে কলেজে অন্তত এক লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর বেশি শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে তা আনুপাতিক হারে বাড়বে। আর কলেজের হাসপাতালের ক্ষেত্রেও এমন ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শনে উঠে এসেছে, অধিকাংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজেই নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ পর্যাপ্ত ফ্লোর স্পেস নেই।
যদিও বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমএ মবিন খানের দাবি, পাঁচ-ছয়টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে নীতিমালা পরিপালনের ঘাটতি রয়েছে। এগুলো নিয়ম অনুযায়ী চলছে না। বাকি সব মেডিকেল কলেজই নিয়ম মেনে চলছে।
বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের ভালো চিকিৎসক তৈরি করতে। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গেও সব মেডিকেল কলেজ নিয়ে আলোচনা করেছি। গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। যেসব মেডিকেল কলেজ নিয়ম মানে না, তাদের আমরা আইনগত কোনো চাপ দিতে পারি না। সেসব কলেজের বিরুদ্ধে সরকারকে সুপারিশ করার এখতিয়ারও আমাদের নেই। তবে যাদের ঘাটতি রয়েছে, তারাও তা পূরণের চেষ্টা করছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, মেট্রোপলিটন সিটির মধ্যে দুই একর নিজস্ব জমিতে কলেজের একাডেমিক ভবনের জন্য এক লাখ বর্গফুট ও হাসপাতাল ভবনের জন্য এক লাখ বর্গফুটের ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে। তবে দুই বছর পর ফ্লোর স্পেস আরো বাড়াতে হবে। মেট্রোপলিটন সিটির বাইরে কলেজের নিজস্ব চার একর জমি থাকতে হবে। একই ক্যাম্পাসে কলেজ ও হাসপাতালের জন্য আলাদা ভবন থাকতে হবে। কোনোভাবেই ভাড়া ভবনে কলেজ ও হাসপাতাল পরিচালনা করা যাবে না। হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা হবে প্রতি শিক্ষার্থীর বিপরীতে পাঁচটি। আর প্রতি ১০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক থাকবে একজন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরেজমিনে দেখা গিয়েছে, কলেজ স্থাপন ও পরিচালনার মৌলিক এসব শর্ত লঙ্ঘন করেই চলছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
এমনই এক প্রতিষ্ঠান রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত কেয়ার মেডিকেল কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির কলেজ ভবন আসাদ গেট এলাকায়। হাসপাতাল ভবন চলছে কলেজ গেট এলাকায়। যদিও নীতিমালা অনুযায়ী একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল ও কলেজ একই ক্যাম্পাসে থাকার কথা। নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে কলেজটির এমবিবিএস উত্তীর্ণ ২৪ শিক্ষার্থীকে ইন্টার্ন করার অনুমতি দিচ্ছে না বিএমডিসি।
কাউন্সিল জানিয়েছে, এ পর্যন্ত পাঁচবার পরিদর্শন করে কলেজটির এসব ঘাটতি পূরণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। তার পরও তাতে কর্ণপাত করেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে কলেজটির শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের অনুমতি না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএমডিসি। তবে মানবিক দিক বিবেচনায় এসব শিক্ষার্থীকে অন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন করার অনুমতি দেয়া হতে পারে বলে কাউন্সিলের একটি সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকার গুলশানে ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ সরকার প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষা উপযোগিতায় ঘাটতি রয়েছে। ফলে চার বছর আগে কলেজটির ভর্তি কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এর পরও উন্নতি না হওয়ায় এ আদেশ বহাল রাখার সুপারিশ করা হয়। যদিও এর এক মাসের মধ্যেই সম্প্রতি আবার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকার বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শরীয়তপুরের মনোয়ারা সিকদার মেডিকেল কলেজ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধেও নিয়ম না মানার অভিযোগ রয়েছে।
বিএমডিসির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. আরমান হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, কলেজকে বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা বিএমডিসির নেই। যদি কোনো কলেজ আমাদের নিয়ম মেনে না চলে, তাহলে সরকারকে সেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার জন্য সুপারিশ করতে পারি। কলেজগুলো নিয়ম না মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি লাভ করা শিক্ষার্থীরা চিকিৎসকের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ রয়েছে ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের (ডিসিআইএমসি) বিরুদ্ধেও। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও কলেজের হাসপাতাল চলার কথা আলাদা ভবনে। যদিও ডিসিআইএমসির উভয় কার্যক্রমই চলছে আবাসিক একটি ফ্ল্যাট ভবনে। এর পরও কলেজটির অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবেই ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি ভবন ভাড়া নিয়ে শিক্ষা ও হাসপাতালের কার্যক্রম চালাচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন করলেও এখনো কলেজটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকারের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।
কলেজটির শুরুর ঘাটতিগুলো এখন পূরণ করা হচ্ছে বলে দাবি করলেন ডিসিআইএমসির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আব্দুল হাই চৌধুরী। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, কলেজ ও হাসপাতালের যেসব ঘাটতি শুরুতে ছিল তা এখন পূরণ করা হচ্ছে। আমরা সীমাবদ্ধতার মধ্যেই ভালো স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার চেষ্টা করেছি।
এছাড়া নীতিমালায় উল্লিখিত শর্ত পরিপালন না করার অভিযোগ রয়েছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধেও। শুরু থেকেই কলেজটির মধ্যে নিয়ম না মানার প্রবণতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। ঢাকার খিলক্ষেতে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত আশিয়ান মেডিকেল কলেজের নানা অনিয়ম নিয়ে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর, সংশ্লিষ্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় (অধিভুক্ত) ও বিএমডিসি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের বিষয়ে কাজ করে। আমরা এসব কলেজে অনিয়ম পেলে মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দিই। সেই অনুযায়ী মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেয়।