প্রথম পর্যায়ে টিকা পাচ্ছে ৪৮ হাজার রোহিঙ্গা

কভিড-১৯ প্রতিরোধে দেশব্যাপী টিকা ক্যাম্পেইন শুরু করছে সরকার। এর আওতায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকেও প্রথমবারের মতো টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের টিকা দেয়া হবে। এ কার্যক্রমে প্রায় ৪৮ হাজার রোহিঙ্গাকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১০ থেকে ১২ আগস্ট তিনদিন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালিত হবে। কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১০ আগস্ট রোহিঙ্গাদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলেও তিনদিনের বেশি টিকা প্রয়োগ করা হতে পারে। এতে ৪৮ হাজার রোহিঙ্গাকে টিকা দেয়া হবে। প্রত্যেককে সিনোফার্মের প্রথম ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হবে। রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষদের টিকা দেয়ার জন্য ক্যাম্পে ৫৬টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ৫৮টি টিকা প্রয়োগকারী দল কাজ করবে। প্রতিটি দলে দুজন টিকাদানকারীর বিপরীতে থাকবেন তিনজন স্বেচ্ছাসেবক। টিকা নিতে আগতদের তথ্য ব্যবস্থাপনা ও নির্দেশনা বুঝতে সহযোগিতা করবেন স্বেচ্ছাসেবকরা। বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ‘ফ্যামিলি কাউন্টিং নাম্বার’ বা পরিবার পরিচিতি নম্বর দেয়া হয়েছে। মূলত এ নম্বরের মাধ্যমে তাদের টিকা দেয়া হবে।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ৪৮ হাজার রোহিঙ্গাকে টিকার আওতায় আনা হবে। প্রথম ডোজ দিতে যদি তিনদিনের বেশি সময় প্রয়োজন হয় তাহলে তা করা হবে। বৃষ্টির জন্য ক্যাম্পের রাস্তা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে চলাচলে সমস্যা হয়। এসব কারণে কিছুটা বেশি সময় লাগতে পারে।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ জেলায় টিকা ক্যাম্পেইন পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসনের সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ বণিক বার্তাকে জানান, জেলায় ২২৮টি টিকাদান কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সব সহযোগিতা দেয়া হয়েছে।

এদিকে নভেল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনতে আজ (শনিবার) থেকে ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন পর্যায়ে গণটিকা কর্মসূচি বা টিকা ক্যাম্পেইন শুরু হচ্ছে। এ কর্মসূচির ছয়দিনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল সকালে রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ক্যাম্পেইন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৭ থেকে ১২ আগস্ট ছয়দিনে সারা দেশের ১৫ হাজারের বেশি টিকাদান কেন্দ্রে প্রায় ৩২ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হবে। সারা দেশে ৪ হাজার ৬০০টি ইউনিয়ন, ১ হাজার ৫৪টি পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৩৩টি ওয়ার্ডে চলবে এ বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি। এতে ৩২ হাজার ৭০৬ জন টিকাদানকারী এবং ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবী যুক্ত থাকবেন। তবে এ ছয়দিনের মধ্যে একদিন করে প্রতি জেলায় ক্যাম্পেইন চালানো হবে। আজ কার্যক্রম শুরু করা হলেও যেসব ইউনিয়ন ও পৌরসভায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি বা ইপিআইয়ের নিয়মিত টিকাদান চালু ছিল, সেখানে ৮ ও ৯ আগস্ট করোনার টিকা দেয়া হবে। তবে ৭ থেকে ৯ আগস্ট সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকা ক্যাম্পেইন চলবে। একই সময় দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায়ও টিকা দেয়া হবে। ২৫ বছর বা এর বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীকে টিকা দেয়া হবে। এক্ষেত্রে পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা অগ্রাধিকার পাবেন। পঁচিশোর্ধ্ব যারা নিবন্ধন করতে পারেননি, তারাও এ সময় টিকা নিতে পারবেন। সিটি করপোরেশন এলাকায় মডার্নার টিকা দেয়া হলেও পৌরসভা ও ইউনিয়নে সিনোফার্মের টিকা প্রয়োগ করা হবে। এ সময় দেশে ১ হাজার ৫টি স্থায়ী কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম আগের মতো চলবে। যারা আগে ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন, তারা উল্লিখিত কেন্দ্রের বিপরীতে মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাওয়ার ভিত্তিতে টিকা নিতে আসবেন।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারের দুই উপজেলায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত বছরের মে মাসে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত আড়াই হাজার রোহিঙ্গা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আর মারা গেছেন ২৮ জন বলে জানিয়েছে ক্যাম্পে কাজ করা বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।

Source: Bonik Barta

Share the Post: