সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার পর্যবেক্ষণ ও মান যাচাইয়ে নিয়মিত সরজমিন পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরিদর্শনে চিকিৎসা সরঞ্জাম, বহির্বিভাগ, রোগী ভর্তি, সেবা নিয়ে রোগীদের সন্তুষ্টিসহ নানা সূচকে মূল্যায়ন হয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর। এ মূল্যায়নের ভিত্তিতে তৈরি হয় সেরা হাসপাতালের তালিকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০২২ সালের তালিকার শীর্ষে থাকা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত (ইনস্টিটিউট), জেলা বা জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্ব
দেশে গত কয়েক দশকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। এর পরও জনসংখ্যা অনুপাতে প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর ঘাটতি রয়েছে। চিকিৎসার মান বৃদ্ধি না হওয়া ও স্বাস্থ্যনীতির ত্রুটিতে বেসরকারি পর্যায়ের বাণিজ্যের কারণে প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া কঠিন। এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নামমাত্র মূল্যে ভালো সেবা পাওয়ার জন্য মানুষের ভরসা সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। জাতীয় নাক কান ও গলা (ইএনটি) ইনস্টিটিউট এমনি একটি বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল। সরকারের বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর মধ্যে সেবার মানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, জেলা বা জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে সরকারিভাবে নিয়মিত র্যাংকিং করে আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সর্বশেষ ১৫টি বিশেষায়িত হাসপাতাল (ইনস্টিটিউট) নিয়ে র্যাংকিংয়ে শীর্ষ অবস্থান নিয়েছে জাতীয় নাক কান ও গলা ইনস্টিটিউট। এরপরে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মাতুয়াইলের শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, জাতীয় কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউট ও জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।
জাতীয় নাক কান ও গলা ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের দাবি, বিশেষায়িত হাসপাতালটির ১৩৫ শয্যায় রোগী ভর্তির হার শতভাগ। দৈনিক পাঁচ শতাধিক রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসছে। অন্যান্য হাসপাতাল থেকে রোগীদের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় এখানে। নাক, কান ও গলার সব ধরনের অস্ত্রোপচার হচ্ছে। টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতাল হওয়ায় রোগীর চাপ বেশি।
স্বাস্থ্য সুবিধার পর্যাপ্ততা (ফ্যাসিলিটি স্কোরিং), অনসাইট মনিটরিংয়ে (অনলাইন পর্যবেক্ষণ), ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশনে (বস্তুগত যাচাই) ও পেশেন্ট স্যাটিসফেকশনে (রোগী সন্তুষ্টি) নিয়ে নির্দিষ্ট নম্বরের স্কোরের ভিত্তিতে এ র্যাংকিং নিয়মিত প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক্ষেত্রে প্রধানত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রাংশের পর্যাপ্ততা, বহির্বিভাগ, রোগী ভর্তিসহ হাসপাতালের সার্বিক সেবা ও সুবিধা বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে অনলাইনের মাধ্যমে অনসাইট মনিটরিংয়ের কাজটি করে থাকেন জেলার সিভিল সার্জন। তাদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ‘ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন’ বা সরজমিন পরিদর্শন করা হয়। এক্ষেত্রে মূলত চিকিৎসা যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন সেবা যাচাই করা হয়। এরপর রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করা হয় তারা সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা (পেশেন্ট স্যাটিসফেকশন)। এক্ষেত্রে ফ্যাসিলিটি স্কোরে ৮০, অনসাইট মনিটরিংয়ে ২০, বস্তুগত যাচাইয়ে ১৫০ ও রোগী সন্তুষ্টিতে ৫০ মোট ৩০০ নম্বরের ভিত্তিতে সার্বিক ফলাফল প্রকাশ করার কথা। ২০২২ সালের শুধু সুবিধার পর্যাপ্ততা বা ফ্যাসিলিটি স্কোরিংয়ের ভিত্তিতে তালিকাটি নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত তালিকায় শীর্ষে থাকা জাতীয় নাক কান ও গলা ইনস্টিটিউট ফ্যাসিলিটি স্কোরিংয়ের ৮০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ৭১ দশমিক ৬৬ নম্বর। দ্বিতীয় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট পেয়েছে ৬৬ দশমিক ১৫। ৬৬ নম্বর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। চতুর্থ জাতীয় কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের স্কোর ৬০ দশমিক ৯৮। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল পঞ্চম স্থানে আছে ৬০ দশমিক ৭৩ স্কোর নিয়ে।
শীর্ষ অবস্থানে থাকা জাতীয় নাক কান ও গলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাকারিয়া সরকার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নাক কান ও গলার যেকোনো চিকিৎসার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান এটি। এখানে সব ধরনের অস্ত্রোপচার এখানে হচ্ছে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) না থাকা, চিকিৎসকসহ অন্যান্য লোকবলের সংকটসহ সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর মধ্যেই সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।’
দেশে চোখের বিশেষায়িত চিকিৎসায় সর্বোচ্চ সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। যেকোনো বয়সের ব্যক্তির চোখের সব চিকিৎসা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে দৈনিক গড়ে দুই হাজারের বেশি রোগী বহির্বিভাগে আসছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চোখের চিকিৎসায় মানুষের আস্থা অর্জন করেছে এ ইনস্টিটিউট। গ্লকোমা, রেটিনা ক্লিনিক রয়েছে। দৈনিক অন্তত ৪০টি ছানির জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়। হাসপাতালের পরিচালকের অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কোনো রোগী চোখের যেকোনো সমস্যা নিয়ে এলে তাকে চিন্তা করতে হবে না। বিশ্বমানের চিকিৎসা পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীও এখানে চিকিৎসা নেন। রোগীরা বিনামূল্যে সব ওষুধ পাচ্ছেন। সক্ষমতার চেয়ে রোগীর চাপ অনেক।’
শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ১৯৯৯ সালে রাজধানীর মাতুয়াইলে প্রতিষ্ঠিত শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট রয়েছে তালিকার তৃতীয় অবস্থানে। সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা পায় এটি। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে শিশু ও মায়ের জন্য অপরিহার্য বিষয়গুলো চিহ্নিত ও ব্যবস্থা করে তাদের স্বাস্থ্যসেবায় নেতৃত্ব দেয়ার ভাবনায় প্রতিষ্ঠা পায় এ হাসপাতাল। মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি, গবেষণা, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও রোগীর সেবা এবং রোগ নিরাময় এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য। বিশেষায়িত এ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. এমএ মান্নান বণিক বার্তাকে জানান, সরকারের প্রণীত আইনের মাধ্যমে পরিচালিত একটি স্বায়ত্তশাসিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এটি। ২০০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রায় সবসময় শতভাগ শয্যায় রোগী ভর্তি থাকেন। আর বহির্বিভাগে রোগী আসেন দৈনিক এক হাজারের কাছাকাছি। সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার জন্য চেষ্টা করা হয়। তবে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র না থাকার কারণে এখনে সব ধরনের অস্ত্রোপচার করা যায় না। প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে চিকিৎসক ও নার্স।
দেশের আদি হাসপাতালের মধ্যে একটি জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। র্যাংকিংয়ে এর অবস্থান পঞ্চম। ১৯৫৫ সালে মহাখালীর নির্জন স্থানে যক্ষ্মা রোগীদের নিরিবিলি রাখার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় যক্ষ্মা হাসপাতাল। এক রোগী থেকে অন্য রোগীকে আলাদা রাখার জন্য সেনিটোরিয়াম সিস্টেমে অবকাঠামো তৈরি করা হয়। এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডের মাঝে রয়েছে বাগান ও করিডোর। বাতাস ও আলো চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত স্থান। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও পরবর্তী সময়ে ইনস্টিটিউটে উন্নীত করা হয়।
কর্তৃপক্ষ বলছে, ৬৭০ শয্যার এ হাসপাতালে দৈনিক বহির্বিভাগে প্রায় ৫০০ রোগী আসছে। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৪০টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। রেসপিরেটরি মেডিসন ও থোরাসিক সার্জারির সেবা সর্বোচ্চ পরিসরে দেয়া হয়। ফ্লিপ মেডিসিন, ইন্টারভেনশন পারমোলজি, ফিজিক্যাল মেডিসিন, রেডিওলজি ইমেজিং, আল্ট্রাসনোগ্রাম, প্যাথলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজির সেবা রয়েছে।
বক্ষব্যাধির পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. খায়রুল আনাম বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে অবকাঠামো বিশ্বমানের। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। দেড় হাজার শয্যার হাসপাতাল করার পরিকল্পনা রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথাসময়ে কাজ করেন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সরকারি ওয়েবসাইটে গত ডিসেম্বরে হেলথ বুলেটিন-২০২০ প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ২০২০ সালে সারা দেশে সরকারি হাসপাতালে ৪ কোটি ১ লাখ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে। আর ৭৮ লাখ মানুষ এসেছিল জরুরি বিভাগে। ৪৮ লাখ রোগী ভর্তি হয়েছিল।
সেরা পাঁচ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের মধ্যে নাক, কান ও গলায় ২০২০ সালে ছোট অস্ত্রোপচার হয়েছে ১০৪টি আর বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে ৭৯৫টি। বাকি হাসপাতালগুলোর মধ্যে চক্ষুবিজ্ঞানে ৯ হাজার ৩২০টি, কিডনি ইনস্টিটিউটে ১ হাজার ৬৫৬টি ও বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটে ৫৭৭টি। যেসব ইনস্টিটিউটের তথ্য স্বাস্থ্য বুলেটিনে দেয়া হয়েছে তার মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) ১০ হাজারের বেশি। যদিও এ হাসপাতালের অবস্থান ষষ্ঠতম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২২টি সরকারি, ১০টি বেসরকারি ও ৭টি স্বায়ত্তশাসিত পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিকেল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। যেখানে বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। আর দেশের সব ধরনের সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে (প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও টারশিয়ারি) শয্যাসংখ্যা ১ লাখ ৬৭ হাজারের কিছু বেশি। প্রতি ১০ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে সরকারি হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ৩ দশমিক ৯৬টি আর বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে ৫ দশমিক ৬১টি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখা থেকে স্কোরিং করা হয়। স্থানীয় কর্মকর্তা যেমন ওই হাসপাতাল বা সিভিল সার্জন যে তথ্য অনলাইনে দিচ্ছেন তা সরজমিনে যাচাই করা হয়। আরো কিছু বিষয় তখন যুক্ত করা হয়। সাধারণত যাদের দেয়া তথ্য ভালো বা খারাপ তাদের হাসপাতালগুলোই পরিদর্শন করা হয়। পরে এগিয়ে থাকা ওইসব প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পুরস্কার দেয়া হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) শর্ত ও নির্দেশনা মেনে এ স্কোরের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হয়। নির্দিষ্ট কিছু শর্তকে সামনে রেখে নম্বর দেয়া হয়। নিয়মিত এই কাজ করা হয়। সবসময় সব হাসপাতাল তাদের অবস্থান একইভাবে ধরে রাখতে পারে না। মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী সবসময় হাসপাতালগুলোকে সর্বোচ্চ মানের সেবা দেয়ার চেষ্টা করতে হয়।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে ১৫টি ইনস্টিটিউটের তালিকা প্রকাশ করেছে তার মধ্যে বাকি ১০ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে শর্ত ও নির্দেশনা সামনে রেখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতালগুলোকে র্যাংকিং করছে তা রিভিউ করা দরকার। সেবাগ্রহীতাদের গভীরভাবে যুক্ত করতে হবে। র্যাংকিং করার ক্ষেত্রে অনেক বিষয় উপেক্ষিত রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে রোগীদের হয়রানি অনেক বেশি। সঠিক চিকিৎসা ও তথ্যের জন্য হয়রানির শিকার হতে হয়। রোগীদের সন্তুষ্টি ‘আপেক্ষিক’ বলে কম গুরুত্ব দেয়ার সুযোগ নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে নির্দেশনা ও শর্ত পূরণের সাপেক্ষে হাসপাতালের র্যাংকিং করছে তা সময় উপযোগী করা প্রয়োজন। এখানে বেশকিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অবশ্যই রোগীদের অপেক্ষার সময়, ব্যক্তিগত বাড়তি খরচ (আউট অব পকেট পেমেন্ট) যুক্ত করতে হবে। রোগীদের সন্তুষ্টি শুধু তাদের হ্যাঁ বা না জেনে নিলে হবে না। বেশকিছু ইন্ডিকেটর দিয়ে তাদের সন্তুষ্টিকে পর্যালোচনা করতে হবে। একজন রোগী হাসপাতালে প্রবেশের পর কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয় তা খেয়াল করতে হবে। সেবা প্রদানকারীরা তাদের সঙ্গে কী ব্যবহার করেন তা দেখতে হবে।’
এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, হাসপাতালের সেবার মান ভালো বলতে হলে অবশ্যই আরো অনেক শর্ত মানতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর আচরণ, রোগীর সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নিতে হবে। আর যে তথ্যের আলোকে সেরা বলা হচ্ছে তা যাচাই করতে হবে। অনেক হাসপাতাল বিনামূল্যে ওষুধ দেয়ার কথা বলছে কিন্তু বাস্তবিক অর্থে বিনামূল্যে ওষুধ পাচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। কাগজে-কলমে যা লেখা তা বাস্তবে পাওয়া যায় না। এখানেই বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। চিকিৎসা নিতে এসে রোগীর নিজস্ব খরচ (আউট অব পকেট পেমেন্ট) দিন দিন বাড়ছে। দেখা যায় হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। সব ধরনের রোগ নির্ণয়ের সুবিধা নেই। উন্নত বিশ্বে রোগীর সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়।