মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী কাফি আহমেদের দুই হাতে অস্ত্রোপচার করা হয় গত বুধবার । জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি কাফির হাতে লাগানো হয়েছে নতুন ত্বক । ভর্তির এক সপ্তাহের বেশি সময় পরে এই অস্ত্রোপচার হয় ।
কাফির মামা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন , আগে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য শিশুটির অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে । কেবিনে দেওয়া হলেও আরও দুই সপ্তাহের বেশি সময় হাসপাতালে থাকতে হতে পারে তাঁর ভাগনেকে ।
বার্ন ইনস্টিটিউটে এখনো ভর্তি ২৯ জনের বেশির ভাগের চিকিৎসা শেষ হতে আরও কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে । বার্ন ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ( আইসিইউ ) ভর্তি রয়েছে ১২ বছরের নাবিদ নেওয়াজ । দুর্ঘটনায় তার শরীরের ৫৩ শতাংশ পুড়ে গেছে । পোড়ার ঘা কিছুটা শুকিয়ে ৪৫ শতাংশে নেমে এসেছে । গতকাল শুক্রবার হাসপাতালে গিয়ে আইসিইউর সামনে দেখা যায় শিশুটির পরিবারের বিষণ্ন সদস্যদের । এমন অনেক রোগীর স্বজন তাদের আরোগ্যের প্রতীক্ষায় রয়েছেন ।

বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ২৯ রোগীর মধ্যে ২৫ জন শিশু বলে জানিয়েছে হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ । গতকাল আজকের পত্রিকাকে জানানো হয় , আগের দিন বৃহস্পতিবার চিকিৎসা শেষে তিনজনকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে । গতকাল কাউকে নতুন করে ছাড়া হয়নি । মোট রোগীর মধ্যে একজন আইসিইউতে , ৫ জন হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে ( এইচডিইউ ) , ৭ জন পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে এবং ১৬ জন কেবিনে রয়েছে ।
ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ( জরুরি বিভাগ ) শাওন বিন রহমান বলেন , বর্তমানে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা সিভিয়ার ( গুরুতর ) । তাদের শরীরে গভীর পোড়া ক্ষত থাকার পাশাপাশি গরম ধোঁয়ায় শ্বাসনালি দগ্ধ হয়েছে । ইনস্টিটিউটের পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায় , যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় হাসপাতালটিতে ৫৬ জনকে ভর্তি করা হয়েছিল । তাদের মধ্যে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে । এখন পর্যন্ত আটজনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে । একজনকে মনোচিকিৎসার জন্য জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে । শরীরের ৩০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগী রয়েছে পাঁচজন ।
পরিচালক অধ্যাপক নাসির উদ্দিন গতকাল দুপুরে বলেন , আইসিইউতে চিকিৎসাধীন নাবিদের অবস্থা আগের মতো রয়েছে । এখন পর্যন্ত চিকিৎসকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী চলছে । তার শ্বাসনালি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়েছিল । শুরুতে ৫৩ % দগ্ধ ছিল , সেখান থেকে ৪৫ শতাংশে আনা গেছে । প্রয়োজন অনুযায়ী সতর্কতার সঙ্গে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে ।
পরিচালক মো . নাসির উদ্দিন বলেন , আজ শনিবারও কয়েকজন রোগীর শরীরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেতে অস্ত্রোপচার করা হবে । পরিস্থিতি দেখে কয়েকজনকে ছাড়পত্র দেওয়া হতে পারে । কোনো কোনো রোগীকে ওয়ার্ড বা কেবিনে পাঠানো হতে পারে । পরিচালক আরও বলেন , ভর্তি রোগীদের বেশির ভাগের চিকিৎসা শেষ হতে কয়েক সপ্তাহ লাগবে । তবে দু- একজন আগামী সপ্তাহে ছাড়া পেতে পারে । এখনো অনেক অস্ত্রোপচার করা প্রয়োজন ।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীর চিকিৎসা শেষ হতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে বলে হাসপাতালটির সূত্রে জানা গেছে । ১৮ বছর বয়সের ওই রোগী তীব্র স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে ( এএসডি ) ভুগছেন । তাঁর বারবার ‘ ফ্ল্যাশব্যাক ’ হচ্ছে , অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বারবার একই ভয়ংকর স্মৃতি মনে পড়ছে । মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন , গুরুতর দুর্ঘটনা , প্রাকৃতিক দুর্যোগ , যুদ্ধ বা অন্য কোনোভাবে মনে আঘাত পাওয়ার মতো ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে এএসডি ঘটে । যথাসময়ে এর চিকিৎসা না নিতে পারলে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে ।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো . মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন , নিজেদের উদ্যোগে তাঁরা একটি কমিটি করেছেন । এটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে । এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাঁরা একটি কার্যপ্রণালি এবং কমিটির প্রস্তাব পাঠিয়েছেন । মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক বলেন , ‘মন্ত্রণালয়কে আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি , তাতে দুটি এনজিও , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ , আমাদের সাইকিয়াট্রিকসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন । ওই কর্মপ্রণালি তাৎক্ষণিক প্রভাব ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি রোধে অনুসরণ করা হয় । শিশু , শিক্ষক , প্রত্যক্ষদর্শী বা উদ্ধারকারীরা যেন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে না পড়ে , তার চেষ্টা আমরা করছি ।’
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী , মাইলস্টোন বিপর্যয়ে এ পর্যন্ত শিক্ষার্থী , পর্যন্ত শিক্ষার্থী , শিক্ষক – কর্মচারী , অভিভাবকসহ ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ।