রাজধানীর দুই হাসপাতাল: ঘোষণার তিন মাসেও শুরু হয়নি করোনা চিকিৎসা

রাজধানীসহ সারা দেশে গত মার্চে নভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ শুরু হলে রোগীদের চিকিৎসায় কিছু সংকট দেখা দেয়। আইসিইউ শয্যার সংকট তো ছিলই, পাশাপাশি ছিল সাধারণ শয্যারও অপ্রতুলতাও। সে সময় করোনা চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধি করে সরকার। কিন্তু সরকারের ঘোষণার তিন মাস পরও ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল ও মিরপুরের লালকুঠির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য হাসপাতাল করোনা চিকিৎসা শুরু করতে পারেনি। হাসপাতাল দুটির কর্তৃপক্ষের দাবি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সহযোগিতা না পাওয়ায় রোগী ভর্তি করা যায়নি। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগটি।

গত ২২ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ মোট পাঁচটি হাসপাতালকে প্রস্তুতির জন্য চিঠি দেয়। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর হাসপাতাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ও লালকুঠি হাসপাতাল পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন। নির্দেশনা অনুযায়ী কভিড-১৯ রোগের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে হাসপাতাল দুটির কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৯ মার্চ চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স চেয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে চাহিদাপত্র দেয়া হয়। পরে লোকবল কমিয়ে আবারো চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। এর মধ্যে এপ্রিলে কিছু চিকিৎসক ও নার্স হাসপাতালটিতে যোগ দিলেও তখন শেষ হয়নি ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। করোনা রোগীদের জন্য ১১০টি সাধারণ শয্যা, নিবিড় পরিচার্যা কেন্দ্রের পাঁচটি শয্যা ও ১৫টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার সুবিধাসহ শয্যা রাখা হয়। তবে অক্সিজেন প্লান্ট ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে যথা সময়ে সরবরাহ করা হয়নি। তাছাড়া বরাদ্দ হয়নি রোগীদের খোরাকি বাজেটও।

করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত করতে নিজেদের কোনো গাফিলতি ছিল না বলে দাবি করেন হাসপাতালটির পরিচালক ডা. প্রকাশ রায়। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু লোকবলসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সরবরাহ করতে পারেনি। রোগীদের খোরাকি বাবদ ১২৫ টাকা দৈনিক বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু করোনা রোগীদের হাই প্রোটিন ডায়েটের জন্য ৩০০ টাকা প্রয়োজন। এ টাকা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সরবরাহ করবে। সেটিও এখনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি।

অন্যদিকে রাজধানীর মিরপুরের ২০০ শয্যাবিশিষ্ট মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য হাসপাতালটি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনের হওয়ায় করোনা রোগীদের ভর্তি করার জন্য চিকিৎসক প্রাপ্তিতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে চিঠি দেয়া হয়। চাহিদাপত্রের এ অনুলিপি পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহা. শামছুল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যরা টানা ৩০ দিন সেবা দিতে পারেন না। ১৫ দিন করে কাজ করতে হয়। এতে অল্পসংখ্যক লোকবল নিয়ে রোগী ভর্তি করা যায় না। সে কারণে ৬০ জন মেডিকেল অফিসার, ২০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ৮০ জন নার্স, ছয়জন টেকনোলজিস্ট ও ২০ জন অন্যান্য কর্মচারী চাওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সাড়া দেননি। তাই সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়ার পরও চিকিৎসা শুরু করা যায়নি।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, লোকবল বা বাজেট দিলেও তারা তখন চিকিৎসা দিতে পারত না। এসব হাসপাতাল প্রস্তুত ছিল না। এখন প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। দ্রুতই সেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা চালু করা হবে।

বিষয়টিকে সমন্বয়হীনতা বলতে নারাজ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. মুহিবুর রহমান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, সংকটের মধ্যেও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। করোনার জন্য নির্ধারিত অন্যান্য হাসপাতাল এখনো পূর্ণ হয়নি, তাই হাসপাতাল দুটি চালু হয়নি। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। যখনই প্রয়োজন হবে হাসপাতাল দুটিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া শুরু হবে।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু। রোগীর চাপ সামলাতে অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি এ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান দুটিতে করোনা রোগীর চিকিৎসা শুরুর নির্দেশ দেয় সরকার। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশে করোনা রোগী কমে যাওয়ায় এ হাসপাতালগুলোর করোনা কার্যক্রম বাতিল করা হয়।

Source: Bonik Barta

Share the Post: