রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল: দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতায় ৬ বছর পার

রেলওয়ের কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও উন্নত চিকিৎসাসেবা দেয়ার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে কমলাপুরের রেলওয়ে হাসপাতালটিকে জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়। এজন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। তবে দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতায় গত ছয় বছরে চুক্তির কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যদিকে গত বছরের শেষদিকে জানা যায়, কমলাপুর স্টেশনকে মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাবে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তখন স্টেশনের পাশাপাশি রেলওয়ে হাসপাতালটিরও আধুনিকায়ন করা হবে। ফলে বাতিল হয়ে যাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে করা চুক্তিটি।

পাঁচ একরের বেশি জমির ওপর স্থাপিত এ হাসপাতালটি দুইতলা ভবনবিশিষ্ট। দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর হাসপাতালটির নামকরণ করা হয় ‘রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা’। তবে গত ছয় বছরে শুধু নাম ছাড়া অন্য কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। চুক্তি অনুযায়ী হাসপাতালটির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ কার অধীনে থাকবে, তা নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মতপার্থক্য শুরু হয়।

চুক্তির পর দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সাত সদস্যের একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব পায়। তাদের পরিচালক নিয়োগ, হাসপাতালের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিগুলোর তালিকা তৈরির জন্য আরেকটি কমিটি গঠন, প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ এবং অকেজো চিকিৎসা সরঞ্জাম মেরামত ও বদলানোর দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে শুরুতেই সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ায় বিষয়গুলো আর এগোয়নি। তাছাড়া হাসপাতালের স্থাবর সম্পত্তিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য যৌথ কমিটির কাছে হস্তান্তরও করা হয়নি।

এসব সমন্বয়হীনতার কথা উল্লেখ করে গত বছরের ২২ জুন বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা সমাধানের তাগিদ দিয়ে হাসপাতালটি উন্নয়নের অনুরোধ করা হয়। চিঠিতে নয় দফা সমাধানের কথা উল্লেখ করে বেশ কয়েকটি সুপারিশও তুলে ধরা হয়।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ৭৫ শয্যার মধ্যে বর্তমানে ৪১ শয্যায় রোগী ভর্তি করা হয়। সম্পদের অপ্রতুলতায় বাকি শয্যাগুলো নামেমাত্র রয়েছে। আটটি কেবিন ও সার্জিক্যাল ওয়ার্ড থাকলেও তাতে নেই অনেক সুযোগ-সুবিধা। চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনার অভাবে যথাযথ চিকিৎসা দিতে পারেন না। বর্তমানে নয়জন চিকিৎসক থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই একজনও। রক্ত, মূত্র ও এক্স-রের মতো কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা ছাড়া অন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার সুযোগ নেই। নেই আধুনিক সার্জারি, আইসিইউ ও এইচডিইউর সুবিধা।

হাসপাতালটির দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা (ঢাকা) ডা. রিপন দাস। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে হাসপাতালের উন্নয়ন হচ্ছে না। আমরা চাই দুই মন্ত্রণালয় বসে সিদ্ধান্ত নিক যে, কীভাবে এটি পরিচালনা করা হবে। আমাদের কাছে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আসুক।

রেলওয়ে অঞ্চলের (পূর্ব) প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ইবনে সফি আব্দুল আহাদ বণিক বার্তাকে বলেন, রেল হাসপাতালগুলো চালাতে হলে এগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ অন্যান্য লোকবল নিয়োগ, নাক-কান, বক্ষ, গাইনি, চোখসহ বিশেষায়িত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, রোগ নিরীক্ষণ ও সার্জারির ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। এগুলো রেল মন্ত্রণালয়ই করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর জন্য সমঝোতা স্মারকের প্রয়োজন পড়ে না।

অন্যদিকে রেলওয়ের হাসপাতালটির সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা। দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সঙ্গে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বণিক বার্তাকে বলেন, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনকে আমরা মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাবে রূপান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এতে স্টেশনটি আধুনিকায়নের পাশাপাশি রেলওয়ে হাসপাতালটিরও আধুনিকায়ন করা হবে। তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যে চুক্তিটি হয়েছে, সেটি আর বহাল থাকবে না।

মন্ত্রী আরো বলেন, শুধু কমলাপুর নয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের যে কয়টি হাসপাতাল রয়েছে, সবগুলোরই অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। এ হাসপাতালগুলোয় রেলওয়ের কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও যেন চিকিৎসাসেবা পায়, সে লক্ষ্যে ঢেলে সাজানো হবে।

Source: Bonik Barta

Share the Post: