স্বাস্থ্যসেবা সবচেয়ে কম পায় ঢাকা বিভাগের প্রতিবন্ধীরা

দেশের মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। সমাজে অবহেলা-অনাদরেই কাটে তাদের জীবন। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান—প্রতি ক্ষেত্রেই হয় বঞ্চনার শিকার। অথচ তারা বোঝা নয়, একটু সহযোগিতা পেলেই সম্পদে পরিণত হতে পারে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। প্রতিবন্ধীদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব

আরাফাত হোসেন রাফসান (ছদ্মনাম)। বছর সাতের এ শিশু দুই বছর বয়স থেকেই মস্তিষ্কের বিকাশগত অক্ষমতায় ভুগছে। ফলে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (এএসডি) ও মনোযোগ দেয়া এবং আবেগপ্রবণ আচরণ নিয়ন্ত্রণ সমস্যাজনিত রোগে (এডিএইচডি) আক্রান্ত হয়। গত পাঁচ বছর ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে নিচ্ছেন তার ব্যাংকার বাবা। সন্তানকে সময় দিতে গিয়ে চাকরিতে ঢোকেননি তার উচ্চশিক্ষিত মা। রাজধানীর বিশেষায়িত সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে রাফসানের চিকিৎসা চলছে। ভর্তি করা হয়েছে বিশেষায়িত বিদ্যালয়ে। দীর্ঘমেয়াদি এ চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে পরিবারটির খরচ হচ্ছে ন্যূনতম অর্ধলাখ টাকা। বিপুল অর্থ খরচ করলেও প্রতিবন্ধীদের জন্য এদেশে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকট, বিদ্যমান অবকাঠামোর ত্রুটি—রাফসানের বাবাকে সবচেয়ে বেশি পোড়ায়।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রতিবন্ধিত্ব অন্যতম এক সমস্যা। বিশেষ এ মানুষগুলোর প্রতি বিভিন্ন ধরনের নিগ্রহ এ সমস্যাকে আরো প্রকট করে তুলেছে। দেশে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে প্রায় তিনজন কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধী। তাদের কেউ জন্মগতভাবে, কেউবা বিভিন্ন রোগ ও দুর্ঘটনার কারণে প্রতিবন্ধী হয়েছেন। তবে সঠিক পরিচর্যা ও পরিকল্পিত ব্যবস্থা নিলে সহজেই তাদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। যদিও এদেশে স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। দেশের এক-চতুর্থাংশ প্রতিবন্ধীই স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে ঢাকা বিভাগের বিশেষ এ স্বাস্থ্যসেবা। এ বিভাগের মাত্র ৫৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোনো রকম স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপে (এনএসপিডি) বিষয়টি উঠে এসেছে। সারা দেশে প্রতিবন্ধী সদস্য রয়েছে এমন ৩৫ হাজারের কিছু বেশি পরিবার থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনটি গত ডিসেম্বরে প্রকাশ করে সরকার।

জরিপে বলা হয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩-তে নির্ধারিত শ্রেণীবিভাগ অনুযায়ী, দেশে ২ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ ও নারী ২ দশমিক ৩২ শতাংশ। সরকারের শেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ। এ হিসাবে ২ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী হলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৬ লাখেরও বেশি। অর্থাৎ এ সংখ্যক ব্যক্তির মধ্যে কোনো না কোনো ধরনের প্রতিবন্ধিতা রয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন ২০০১ অনুযায়ী প্রতিবন্ধীর সংজ্ঞা হচ্ছে জন্মগতভাবে, রোগাক্রান্ত হয়ে, দুর্ঘটনায় আহত হয়ে, অপচিকিৎসা বা অন্য কোনো কারণে দৈহিকভাবে বিকলাঙ্গ বা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। ফলে স্থায়ীভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতাহীন ও স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম ব্যক্তি। আর ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনে মোট ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার কথা বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল-কেন্দ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধীরা নিম্নমানের সেবা পাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে জরিপের ফলাফলে বলা হয়, বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সেবা পাওয়া কষ্টকর। উচ্চমানের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার জন্য কাঠামোগত সুবিধা থেকে শুরু করে অন্যান্য সুবিধা গুরুত্বপূর্ণ। জরিপের আগের তিন মাসের যেকোনো সময় প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ার কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছে বিবিএস। এতে দেখা যায়, দেশে প্রতিবন্ধীদের ৬২ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরাঞ্চলের প্রতিবন্ধীদের মধ্যে সেবা পাওয়ার হার বেশি। আবার বিভাগ ভিত্তিতে সবচেয়ে কমসংখ্যক প্রতিবন্ধী স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে ঢাকা বিভাগে। বেশিসংখ্যক সেবা পাচ্ছে সিলেটের প্রতিবন্ধীরা, ৭৩ শতাংশ। বাকি বিভাগগুলোর মধ্যে বরিশালের ৬২ শতাংশ, চট্টগ্রামের ৬৮, খুলনার ৬২, ময়মনসিংহের ৫৬, রাজশাহীর ৬০ ও রংপুরের ৬৬ শতাংশ প্রতিবন্ধী স্বাস্থ্যসেবা পায়।

বিবিএসের জরিপ থেকে আরো জানা যায়, প্রতিবন্ধীদের মধ্যে শূন্য থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের ৭৬ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা পায়, পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী বিশেষ এ শিশু-কিশোরদের ৫৭ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকে। এছাড়া ১৮ থেকে ৪৯ বছর বয়সী প্রতিবন্ধীদের ৫৮ শতাংশ, ৫০-৬৪ বছর বয়সী এবং ৬৫ বছর বা তার ঊর্ধ্বে স্বাস্থ্যসেবা পায় ৬৭ শতাংশ করে।

শিশু রাফসানের বাবা কামাল হোসাইন বলেন, ‘আমাদের বাসা রাজধানীর গেন্ডারিয়ায়। মূলত ছেলের স্কুলের জন্যই এখানে থাকা। কিন্তু এ এলাকায় চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় রাজধানীর অন্যপ্রান্তে যেতে হয়। থেরাপির জন্য যেতে হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় চিকিৎসার জন্য। আবার এগুলোকে অবকাঠামোগতভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানও বলা যায় না। ভাড়া করা ফ্ল্যাটে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান খুলে বসা হয়েছে ব্যবসায়ী মনোভাব নিয়ে। আবার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে যে যাব, সেখানে প্রতিনিয়তই হয়রানির শিকার হতে হয়।’

বিবিএসের তথ্য বলছে, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা গ্রহণের হার ২৭ শতাংশ। আবার সারা দেশের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর মাতৃ ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সেবা নিয়েছেন ৪ শতাংশ প্রতিবন্ধী। বাকিদের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ১৫ শতাংশ, এমবিবিএস চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ১৩ শতাংশ, গ্রাম্য চিকিৎসকের মাধ্যমে ২৪ শতাংশ, অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের দোকান থেকে ১৭ শতাংশ এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন দশমিক ৩০ শতাংশ প্রতিবন্ধী।

দেশের বহুজাতিক কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন প্রকৌশলী দম্পতি আশিকুর রহমান ও ফারহানা শেলী (ছদ্মনাম)। তাদের একমাত্র সন্তান ইয়াসিন। বয়স ১২ বছর। তবে জন্মের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার জন্ডিস ধরা পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে ফটোথেরাপি দেয়া হয়। এতে তার গায়ের রঙ পাল্টে যায়। বাকি সব ঠিকই ছিল। বছর দুই পর শিশুটির মস্তিষ্কের স্নায়ুবিক সমস্যা দেখা দেয়। এরপর দীর্ঘ সময় সরকারি ও বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা চলে। বিদেশে নিয়েও দেখানো হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে দেশে সন্তানের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হয়নি বলে মনে করেন মা-বাবা। তাই নিজেদের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে বছর পাঁচেক আগে স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এ দম্পতি। উদ্দেশ্য প্রতিবন্ধী ছেলের উন্নত চিকিৎসা ও শিক্ষা।

আঘাতজনিত প্রতিবন্ধীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছে দ্য সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)। এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধীরা সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে। কোথাও কোথাও তারা হচ্ছে অধিকারবঞ্চিত। এজন্য আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। সব প্রতিবন্ধী যেন স্বাস্থ্যসেবা পায় এজন্য আমরা চেষ্টা করছি। তবে নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। সর্বত্রই চালু করতে হবে প্রতিবন্ধীবান্ধব সেবা। আবার চিকিৎসা ব্যয় না কমানো গেলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য দুষ্কর হয়ে পড়বে।’

স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে বলে প্রতিবন্ধী ও তাদের পরিবার জানিয়েছে। বিবিএসের তথ্য মতে, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত ত্রুটি বা অপর্যাপ্ততার কারণে ৭ শতাংশের বেশি প্রতিবন্ধী সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যোগাযোগ ও তথ্য ব্যবস্থাপনার অপ্রতুলতার কারণে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে বাধা মনে করছে ৪ শতাংশ প্রতিবন্ধী। একইভাবে সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে চিকিৎসার ব্যয়। ৮১ শতাংশ প্রতিবন্ধী সেবা প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছে, কেবল চিকিৎসার ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সাহায্যকারী না থাকার কারণে ৭ শতাংশ, পরিবারের সহযোগিতার অভাবে ৩১ শতাংশ, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ৪ শতাংশ, বসবাসের এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে ১০ শতাংশ, জানাশোনার অভাবে ১ শতাংশ ও অন্যান্য কারণে ৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোনো স্বাস্থ্যসেবাই পাচ্ছে না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংগঠিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার করণে দেশের সব মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত করা কঠিন। প্রতিবন্ধীদের সেবা পারিবারিক ও স্বেচ্ছাসেবী ব্যবস্থাপনায় বেশি দেয়া হয়। নগরায়ণের সঙ্গে সমন্বয় করে চিকিৎসা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন হয়নি। বর্তমানে পরিবারগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হচ্ছে। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং সমাজসেবী মানুষও কমে যাচ্ছে। ঢাকাকে পশ্চিমা ধাঁচের শহরে রূপান্তর করা হচ্ছে। তবে উন্নত দেশগুলোতে যে ধরনের অবকাঠামো থাকে তা প্রতিস্থাপন করা হয়নি এ শহরে। ফলে প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আজ অনেকটাই উপেক্ষিত।

‘দেশে সব শ্রেণীর মানুষ সমান্তরাল স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না’—মন্তব্য করে চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের জন্য অবকাঠামো, জনবল, কারিগরিসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা জরুরি। আর এসব দেয়ার কথা সরকারের। এতে সমাজসেবী সংগঠনগুলো সহযোগিতা করবে। তবে এ কাজগুলো করার জন্য যে সংগঠিত ব্যবস্থাপনা সরকারিভাবে থাকা প্রয়োজন তা নেই। অথচ নগরায়ণ বাড়ছে, উন্নয়ন হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে সার্বিকভাবে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’

তার মতে, ‘আগের সমাজসেবী হাসপাতাল, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার হাসপাতাল, সমিতির হাসপাতাল ও ডিসপেনসারিগুলো এখন ক্লিনিকে রূপান্তরিত হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান সহায়তা করবে সেগুলোও ব্যবসায়িক মনোভাব নিয়ে চলছে। এতে খরচ বেড়ে গেছে। সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা সঠিক হয়নি। তাই কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যথাযথ হবে না।’

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বলছে, দেশের যে ধরনের প্রতিবন্ধী রয়েছে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। তার যখনই অসুস্থ হচ্ছেন তখন স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসছেন ও পাচ্ছেন। তাদের সব ক্ষেত্রেই অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। সরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। অবকাঠামোগত বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. সাইদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় যে ব্যক্তিই আসুক না কেন তাকে সেবা না দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি হাসপাতালে শিশু বিভাগের অন্তত একটি বা দুটি বিছানা প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য যেন রাখা হয়।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধিতা ও সাধারণ অসুস্থতা এক নয়। তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়। নার্স ও চিকিৎসকরা তাদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি দেন। অবকাঠামোর বিষয়গুলো এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। নতুন অবকাঠামোগুলোতে প্রতিবন্ধীবান্ধব করা হচ্ছে।’

চিকিৎসার ব্যয় সম্পর্কে এ পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা কিছুটা ব্যয়বহুল। তবে সরকারি হাসপাতালে কোনো খরচ নেই। যারা ব্যয়ের কথা বলছেন তারা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। নতুন সেক্টর কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসাসেবার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হচ্ছে।’

Source: Bonik Barta

Share the Post: