স্বাস্থ্যসেবা ২০২২: মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: দেশসেরা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার পর্যবেক্ষণ ও মান যাচাইয়ে নিয়মিত সরজমিন পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরিদর্শনে চিকিৎসা সরঞ্জাম, বহির্বিভাগ, রোগী ভর্তি, সেবা নিয়ে রোগীদের সন্তুষ্টিসহ নানা সূচকে মূল্যায়ন হয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর। এ মূল্যায়নের ভিত্তিতে তৈরি হয় সেরা হাসপাতালের তালিকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০২২ সালের তালিকার শীর্ষে থাকা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত, জেলা বা জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব

দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ আছে ৩৭টি। এর মধ্যে হাসপাতাল আছে ২৯টির। এসব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বরাবরই রোগীর চাপ থাকে বেশি। প্রতিনিয়তই রোগীও ভর্তি হচ্ছে শয্যা সংখ্যার কয়েকগুণ। হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে সরকারিভাবে নিয়মিত র‍্যাংকিং করে আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সর্বশেষ র‍্যাংকিংটি করা হয়েছে ১৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে। এতে দেখা যায়, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর মধ্যে র‍্যাংকিংয়ে এখন শীর্ষ স্থানে রয়েছে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এছাড়া তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

রোগীর বাড়তি চাপ নিয়েই নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালে হাসপাতালটিতে বেড অকুপেন্সি রেট বা শয্যার বিপরীতে রোগীর হার ছিল ১৭৭ শতাংশ। আগের বছর তা ২২০ শতাংশও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, এখানকার শয্যা সংখ্যা ৯০০ হলেও সব সময় রোগী ভর্তি থাকছে আড়াই হাজারের কাছাকাছি। জরুরি ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসছেন গড়ে তিন হাজারের মতো রোগী। আবার হাসপাতালটিতে রয়েছে জনবল সংকটও।

এ চাপ ও সংকটের মধ্যেও হাসপাতালের চিকিৎসকরা আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন দাবি করে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্য সুবিধা ও সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে নিয়মিতভাবেই সচেষ্ট থাকছেন তারা। এখানে অনেক কম খরচে কার্ডিয়াক এনজিওগ্রাম, কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস, ক্যান্সার আক্রান্তদের রেডিওথেরাপিসহ জটিল রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করতে পারছেন। শিশু স্বাস্থ্যসেবার মানও ভালো। সম্প্রতি হাসপাতালের চার শয্যার ডায়ালাইসিস সেন্টারকে ২৪ শয্যায় নেয়া হয়েছে। এখানে দিনে ৭০ জনকে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া সম্ভব।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সারা দেশেই স্বাস্থ্যসেবায় লোকবলের সংকট রয়েছে। তবে এর মধ্যেও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের চিকিৎসকরা অত্যন্ত আন্তরিক হওয়ায় সেবাপ্রত্যাশীরা ভালো সেবা পাচ্ছেন। জনবল সংকট দূর করা গেলে সেবার মান আরো ভালো হবে। এখানে যেসব সেবা দেয়া হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সেবা। যারা জন্মগতভাবে বধির, তাদের কানের ভেতর এ ডিভাইস লাগানো হয়। ঢাকার বাইরে এ সেবা আর কোনো হাসপাতালে দেয়া হয় না। এরই মধ্যে আমরা ২৮টি কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট করেছি। গত ছয় মাসে আগে যাদের আমরা ইমপ্লান্ট করেছিলাম তাদের মধ্যে দুটি শিশু এখন কথাও বলতে পারছে। আমরা সেবার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

দ্বিতীয় স্থানে থাকা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সরজমিন ঘুরে ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত টারশিয়ারি পর্যায়ের সরকারি এ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে দৈনিক গড়ে ১০ হাজার মানুষ সেবা নিতে আসছেন। এর মধ্যে বহির্বিভাগে প্রায় সাত হাজার আর রোগী ভর্তি বা ইনডোরে সাড়ে তিন হাজার এবং ওয়ান স্টপ সার্ভিসে সেবা নেন প্রায় সাতশ সেবা প্রত্যাশী।

কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতালে রোগীদের শতভাগ ওষুধ সরবরাহ করা হয়। উন্নত পরিবেশ ও সেবার মান ভালো হওয়ায় প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। ৪৫০ চিকিৎসক ও প্রায় ১ হাজার ১০০ নার্স নিয়ে ৩৬টি বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। ১৯৯২ সাল থেকে হাসপাতালটিতে পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র চালু করা হয়।

হাসপাতালটির উপপরিচালক ডা. মো. জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সেবার মান ভালো হওয়ায় প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রয়েছে উন্নত বিশ্বের সর্বাধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র। এর মধ্যেও আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জনবলের স্বল্পতা রয়েছে। তবে আমাদের চেষ্টায় ঘাটতি নেই।’

স্বাস্থ্য সুবিধার পর্যাপ্ততা (ফ্যাসিলিটি স্কোরিং) নিয়ে ৮০ নম্বরের স্কোরের ভিত্তিতে এ র‍্যাংকিং প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক্ষেত্রে প্রধানত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রাংশের পর্যাপ্ততা, বহির্বিভাগ, রোগী ভর্তিসহ হাসপাতালের সার্বিক সেবা ও সুবিধা বিবেচনা করা হয়। এতে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্কোর ৬৫ দশমিক ১২। দ্বিতীয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্কোর ৬৪ দশমিক ৪৯। ৬৩ দশমিক ৩৯ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চতুর্থ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্কোর ৬৩ দশমিক ২০। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পঞ্চম স্থানে আছে ৬২ দশমিক ৯০ স্কোর নিয়ে।

তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ডায়ালাইসিস, এনজিওগ্রাম, আইসিইউ ও প্রসূতি সেবার মানের জন্য হাসপাতালটি শীর্ষ তালিকায় স্থান পেয়েছে বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছে তালিকার চতুর্থ অবস্থানে। হাসপাতালটি পরিচালনা করতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু জায়গায় জনবল সংকটের মতো কিছু সমস্যা মোকাবেলা করতে হয় বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ-সংশ্লিষ্টরা।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এখানে সব ধরনের চিকিৎসাসেবার মান ভালো। ৫০০ শয্যার বিপরীতে দৈনিক প্রায় দেড় হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। এখানের অস্ত্রোপচারের মান নিয়ে রোগীদের সন্তুষ্টি রয়েছে। হাসপাতালটিতে কিছুটা অভাব রয়েছে। এর মধ্যে অ্যানেসথিয়ালজিস্টের সংকট সবচেয়ে বেশি। ৩৮টি পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র আটজন।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের র‍্যাংকিংয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছে পঞ্চম স্থানে। ২০০৭ সাল থেকে ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই), সিটি স্ক্যানসহ ক্রমান্বয়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ), নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (এনআইসিইউ), এন্ডোস্কপি ইউনিট, রেডিওথেরাপি, কিডনি ডায়ালাইজিং ইউনিটসহ চিকিৎসা সুবিধা যুক্ত হয়েছে হাসপাতালটিতে। পাশাপাশি গৃহ সহিংসতা, নির্যাতন ও নিপীড়ন মোকাবেলার জন্য ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার ও ২৫ শয্যাবিশিষ্ট বার্ন ইউনিট রয়েছে। ২০১২ সালে কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট সংযুক্ত করা হয়। স্ট্রোক ইউনিটে যুক্ত করা হয়েছে উন্নত প্রযুক্তি। এতে স্ট্রোক হওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে আনতে পারলে মৃত্যু ঝুঁকি কমানো যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১৮ সালে নির্মাণ করা হয় বিশ্বের প্রথম বোনস (হাড়) লাইব্রেরি। তবে এখানেও জনবল সংকট প্রকট আকার নিয়েছে। একটি ফরেনসিক মর্গ, ৪৬টি বিভাগ ও ৩৭টি নিবন্ধিত ওয়ার্ডের বিপরীতে চিকিৎসকের পদ মাত্র ৩৬০টি।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শামীম আহসান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাড়ে তিন কোটি মানুষের চিকিৎসার আস্থার ঠিকানা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। গড়ে দৈনিক সাড়ে তিন হাজার রোগী আসছেন। ১ হাজার ৩০০ শয্যা থাকলেও অনুমোদন রয়েছে ২ হাজার ২০০ শয্যার। নতুন করে বর্ধিত শয্যার জন্য লোকবল বাড়ানো যায়নি। দক্ষিণবঙ্গে বা উত্তরবঙ্গের দিকে যেখানে অনেকগুলো মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থাকলেও চট্টগ্রাম অঞ্চলে পূর্ণাঙ্গভাবে বেশি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়নি। ফলে এখানে চাপ বেশি থাকে। বাংলাদেশের পুরনো আটটি মেডিকেলের মধ্যে আমাদের জন্য বরাদ্দও কম রয়েছে। এত সংকটের মধ্যেও নিয়মিত নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। এ হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. নবীউর রহমান জানান, এখানে হাসপাতালে ২৭ জন কিডনি রোগী ২৪ ঘণ্টা ডায়ালাইসিসের সুযোগ পাবেন। ৪০ শয্যার আইসিইউ, ১৪ শয্যার সিসিইউ সেবাসহ ৫০০ শয্যার এ হাসপাতালে রয়েছে অত্যাধুনিক রক্ত পরিসঞ্চালন ইউনিট। এছাড়া মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, চক্ষু, নাক-কান-গলা, শিশুদের বিশেষায়িত সেবা দেয়া হচ্ছে। তবে এ হাসপাতালটিও চলছে জনবল সংকট নিয়ে। এখানে ২০৩ চিকিৎসক পদের বিপরীতে ১০৭ জন ও ৫২২ নার্স পদের বিপরীতে ৫০৩ জন কর্মরত রয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে সর্বশেষ র‍্যাংকিংয়ের তথ্য শুধু ফ্যাসিলিটি স্কোরিংয়ের ভিত্তিতে প্রকাশ হলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সার্বিকভাবে এর বাইরেও আরো তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় করার কথা। এগুলো হলো অনসাইট মনিটরিং (অনলাইন পর্যবেক্ষণ), ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন (বস্তুগত যাচাই) ও পেশেন্ট স্যাটিসফেকশন (রোগী সন্তুষ্টি)। এক্ষেত্রে অনলাইনের মাধ্যমে অনসাইট মনিটরিংয়ের কাজটি করে থাকেন জেলার সিভিল সার্জন। তাদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ‘ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন’ বা সরজমিন পরিদর্শন করা হয়। এক্ষেত্রে মূলত চিকিৎসা যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন সেবা যাচাই করা হয়। এরপর রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করা হয় তারা সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা (পেশেন্ট স্যাটিসফেকশন)। এক্ষেত্রে ফ্যাসিলিটি স্কোরে ৮০, অনসাইট মনিটরিংয়ে ২০, বস্তুগত যাচাইয়ে ১৫০ ও রোগী সন্তুষ্টিতে ৫০—মোট ৩০০ নম্বরের ভিত্তিতে সার্বিক ফলাফল প্রকাশ করার কথা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শেখ দাউদ আদনান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখা থেকে স্কোরিং করা হয়। স্থানীয় কর্মকর্তা যেমন ওই হাসপাতাল বা সিভিল সার্জন যে তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে পাঠায় তা সরজমিনে পরিদর্শন করা হয়। যে তথ্য দেয়া হয়েছে তা সঠিক কিনা তা যাচাই করা হয়। সাধারণত যাদের দেয়া তথ্য ভালো বা খারাপ তাদের হাসপাতালগুলোই পরিদর্শন করা হয়। পরে এগিয়ে থাকা ওইসব প্রতিষ্ঠানকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার দেয়া হয়।’

তবে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে প্রক্রিয়ায় হাসপাতালের স্কোরিং করে তা অনেকটাই প্রকাশ করা হয় না। শুধু নম্বর প্রকাশ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অনেক বিষয় বাদ দেয়া হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে হয়রানির চিত্র খুবই স্বাভাবিক। সবচেয়ে বড় জটিলতা তৈরি হয় সঠিক তথ্যপ্রবাহ না থাকার কারণে। গ্রামের একজন সাধারণ ব্যক্তি বড় ধরনের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসে হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকেন। কোনো কোনো সময় সঠিক চিকিৎসাসেবাই কঠিন হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে চিকিৎসা নিতে এসে যে সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এড়িয়ে যাচ্ছে।’

হাসপাতালের র‍্যাংকিং করার ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ অনুপস্থিত বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেভাবে রেটিং করছে তা বলছে না। তারা যদি সুস্পষ্ট ও মানসম্মত একটি পদ্ধতি চালু করত তাহলে সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এ স্কোরে অন্তর্ভুক্ত হতো। সঠিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (সিভিল সার্জন, হাসপাতালের পরিচালক) কিছু তথ্য অধিদপ্তরে পাঠায় আর সে অনুযায়ী স্কোরের জন্য পরিদর্শন করে রেটিং করা হয়। রোগীর সন্তুষ্টি দেখতে হলে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এ বিষয়টি করা হয় না। রোগী সন্তুষ্টির বিষয়ে সঠিকভাবে স্কোরিং করা হয় না। কেননা রোগীদের জিজ্ঞাসা করা হয় না যে তারা আসলে কী সেবা পাচ্ছেন। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়েও নানা রকম মতামত রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্কোরের তালিকা সন্দেহপূর্ণ।’

তার মতে, জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বব্যাপী হাসপাতালে মান নির্ণয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা থাকার কথা। সেখানে অনেকগুলো নির্ণয়ক থাকবে। উন্নত বিশ্বে ওয়েটিং টাইম বা অপেক্ষাকালীন বিবেচনা করা হয়। সেবাটা পেতে রোগীদের কত সময় লাগে সেটা দেখা হয়। সেজন্য অপেক্ষার সময়টাকে বেশি মূল্যায়ন করা হয়। এরপর দেখা হয় কাউন্সেলিংটা ঠিকমতো হলো কিনা। নির্ভুল রোগ নির্ণয়ের বিষয়টিও সেসব দেশ গুরুত্ব দেয়। দেশে এসব বিষয়গুলো খুবই হালকাভাবে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে যারা সেবা দিচ্ছেন তাদের প্রশিক্ষণ, সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে তারা কতটুকু মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছেন এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত না করলে সেবার মান কেমন তা বোঝা যাবে না।

অধিদপ্তরের সর্বশেষ র‍্যাংকিংয়ে সেরা পাঁচ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে এমএজি ওসমানীতে ২০২০ সালে ছোট অস্ত্রোপচার হয়েছে ২৯ হাজার ২৮৭টি আর বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে ১১ হাজার ৩১০টি। বাকি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহে বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার, শহীদ জিয়াউর রহমানে হয়েছে সাড়ে ছয় হাজার, খুলনায় হয়েছে সাড়ে চার হাজার এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বড় পরিসরের জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে ১৫ হাজার। স্বাস্থ্য বুলেটিনে উল্লিখিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক বড় পরিসরের অস্ত্রোপচার হয়েছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রায় ৩১ হাজার বড় অস্ত্রোপচার হলেও স্কোরিংয়ে এ হাসপাতাল ১৫তম স্থানে রয়েছে।

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বণিক বার্তার সিলেট, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর ও বগুড়া প্রতিনিধি এবং চট্টগ্রাম ব্যুরো)

Source: Bonik Barta

Share the Post: